মিরসরাই প্রতিনিধি>>
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই অংশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। গত এক সপ্তাহে ৯জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছে। মহাসড়কে সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল বন্ধের পর দুর্ঘটনা কিছুটা কমলেও গত কয়েক দিন ধরে বেড়ে গেছে। অকালেই ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। অদক্ষ, নেশাগ্রস্থ চালক ও ফিটনেস বিহীন গাড়ি সহ বিভিন্ন কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর সড়কের সোনাপাহাড় বিএসআরএম এলাকায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো বিএসআরমের শ্রমিক মোশাররফ হোসেন ( ৩২) ও কাভার্ড ভ্যানের হেলপার (২৮) অজ্ঞাত নিহত হয়।
হাইওয়ে পুলিশের জোরারগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ফরিদ উদ্দিন জানান, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রাক বগুড়া ট ১১-০৪১৫ কে অপর একটি কাভার্ডভ্যান ঢাকা মেট্রো ট-১১-০৪০৪ পেছন থেকে ধাক্কা দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বড়তাকিয়া এলাকায় দ্রুতগামী একটি বাস চাপায় খালেদা আক্তার নামে এক গৃহবধূ মারা যায়। এসময় মারাত্মক আহত হয় তার দুই বছরের সন্তান সাব্বির হোসেন।
একইদিন সকাল ১১টায় বড়তাকিয়া এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীগামী একটি বাস পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে গেলে জেসমিন (২৮), শাওন (১০), শাহাদাত (২২), সুজন (৩২) ও জাহানারাসহ (৪৫) ১৫ জন আহত হয়েছেন।
সর্বশেষ গত শনিবার মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীবাহী বাসে পেছনের দিক থেকে আসা বেপরোয়া গতির কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় বাসের ৪ জন যাত্রী, বাস চালকের ১ সহকারী নিহত হয়। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন যাত্রী।
নিহতরা হলো চট্টগ্রাম কর্ণফুলি পেপার মিলস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আহমদ (৫৫)। তিনি নাটোর জেলার কাঁঠালবাড়িয়া উপজেলার হাফিজ উদ্দিনের ছেলে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) মেকানিক্যাল বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র তাওকির তাজামুল সুস্মিত (২০)। সে গাজিপুর পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিকেশন (পিবিআই) কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুর সাত্তারের পুত্র। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আহম্মদ নগর গ্রামে। চট্টগ্রাম কর্ণফুলি পেপার মিলস লিমিটেডের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সরোয়ার্দী (৬০)। তিনি ঢাকার মিরপুর এলাকায় বসবাস করেন। শ্যামলী বাসের হেলপার মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর মিয়াপাড়া এলাকার মীর মোফাজ্জলের ছেলে মোহাম্মদ আলী (৫০)। পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের নুর হোসেন খানের মেয়ে শাহিদা আক্তার (২৬) তিনি চট্টগ্রাম সিইপিজেডের ইয়ংওয়াং গার্মেন্টেসে কাজ করেন বলে জানা গেছে।
দুর্ঘটনা কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল, অদক্ষ চালক, চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানোসহ আরও প্রায় ২০টি কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে যাত্রীবাহী ও মালবাহী যানবাহনগুলো।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কে সতর্কীকরণ বার্তা সম্বলিত বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন থাকা সত্ত্বেও চালকরা তা মানছেন না। বাঁকের মধ্যে সর্বচ্চো ৪০ কিলোমিটার গতিসীমার বাহিরে গাড়ি না চালানোর আইন আছে। কিন্তু তা লঙ্ঘন করে মালবোঝাই ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ দ্রুতগামী গাড়িগুলো চালানো হচ্ছে। এতে বাঁকের মধ্যে গাড়ী উল্টে পড়ে অথবা মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এর বাইরেও মাত্রারিক্ত গতি, চালকের ক্লান্তি, দুটি গাড়ি একসাথে পাশাপাশি চলা, বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির গতি সর্ম্পকে না জেনে ওভারটেক করা, ভুলভাবে মোড় নেয়া, চালকদের ভুল সংকেত, ভুল ওভারটেকিং, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা, চালকের পরিবর্তে হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, খানাখন্দ সড়ক, আবহাওয়াগত পরিস্থিতি (কুয়াশাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ), অতিরিক্ত বহন (পণ্য ও মানুষ), চাকা ফাটা, ঝুঁকিপূর্ণ গতিরোধক (স্পীড ব্রেকার), ঝুঁকিপুর্ণ ও সরু ব্রিজ-কালভাট সড়কে স্বাভাবিক যান চলাচলে অন্তরায় হয়ে থাকে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিয়মিত কয়েকজন চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক এতটাই ব্যস্ত যে, প্রতি মুহুর্তেই এখানে দ্রুতগতির গাড়িগুলো তুলণামুলক কমগতির গাড়িগুলোকে ওভারটেক করে। বিপরীত দিক থকে আসা গাড়ীর গতি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় প্রায় মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এটি এ সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ বলে জানা গেছে। সড়কও জনপদ বিভাগ (সওজ) কর্তৃপক্ষ সড়কের বিভিন্ন এলাকায় গাড়ির গতিসীমা নির্ধারণ করে দিলেও চালকরা ওই গতিসীমা না মেনে মাত্রাত্রিক্ত গতিতে গাড়ি চালায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাক-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের মস্তান-নগর বাইপাস, মিঠাছড়া বাইপাস, বড়তাকিয়া বাইপাস, ছোট কমলদহ বাইপাস এলাকায় বেশি দুর্ঘটনা ঘটে।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ ফরিদ উদ্দিন জানান, মহাসড়কে সিএনজি চলাচল বন্ধ হওয়ার পর দুর্ঘটনা অনেকটা কমে আসে। কিন্তু গত কয়েকদিন দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চালকদের অদক্ষতা, অসতর্কতার কারণে এসব দূর্ঘটনা ঘটে।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমইউ






