এম মাঈন উদ্দিন>>
সবুজ পাহাড়ের বুকে মায়াবী হরিণের বিচরণ,নানা প্রাতির বৃক্ষরাজির সমাহারে মোহনীয় প্রকৃতি,হরেক রকমের পাখি আর জীবজন্তুর বিচরণ, সেই সাথে মন কাড়ানো পাহাড়ি সৌন্দর্যে অপরূপ সম্ভাবনাময় এক পর্যটনকেন্দ্র হিলসডেল মাল্টিফার্ম। মিরসরাই উপজেলার ১ নং করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম অলিনগর গ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ৩৪ একর জায়গা জুড়ে হিলসডেল মাল্টিফার্মটি অবস্থিত। এখানে বর্তমানে রয়েছে ২৭ টি চিত্রাহরিণ, ১৫০ টি গাভী আর বাচুর নিয়ে অত্যাধুনিক ডেইরি ফার্ম,হরেক রকমের প্রায় ৪০ হাজার বৃক্ষরাজি, ৮শ উন্নত জাতের আমগাছ।এছাড়াও এখানে রয়েছে ২০ টি বাকবেঙ্গল ছাগল,৭ টি গড়াল,কালিম পাখি,রাজহাঁস সহ আরো অনেক পশু পাখি। অল্প কিছুদিনের মধ্যে যুক্ত হবে ময়ুর, তিতির, টার্কি সহ আকর্ষণীয় বিভিন্ন পশু পাখি।
২০০৬ সালে অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী ব্যবসায়ী মঈন উদ্দীনের ব্যক্তি উদ্যোগে এ মাল্টিফার্মটি যাত্রা শুরু করে। তবে এই ফার্মটির বিশেষত্ব এবং আকর্ষণীয় দিক হলো মায়াবী চিত্রাহরিণ। বাংলাদেশে যে খুবই অল্প সংখ্যক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক ভিত্ততে হরিণ পালনের লাইসেন্স পেয়েছেন তার মধ্যে হিলসডেল মাল্টিফার্ম অন্যতম।পাহাড়ি পরিবেশে এখানে সফলতার সাথে বাণিজ্যিক ভিত্ততে হরিণ পালন করা হচ্ছে এবং হরিণের প্রজননও হচ্ছে।
খামারের সার্বিক দায়িত্বে থাকা নাজিম উদ্দিন রিপন জানান,”এ মাল্টিফার্ম দেখতে দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন।কেউ সবুজ প্রকৃতি দেখতে,কেউ বৃক্ষরাজি দেখতে,কেউ পাহাড়ি প্রকৃতির স্বাদ নিতে, কেউবা আবার ডেইরি ফার্ম কিংবা খামার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নিতে এখানে আসেন।তবে সবচেষে বেশি আসেন আকর্ষণীয় হরিণ দেখতে।এখানে নিয়মিত ২০-২৫ জন লোক কাজ করে। আর ডেইরি ফার্ম এবং জীব জন্তু লালন পালন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এবং এখানকার দুধ ভেজালমুক্ত হওয়ায় স্থানীয় বাজারেও ব্যাপক চাহিদা আছে।”
এই খামারটি দেখতে খুলনা থেকে এসেছিলেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী রাসেল। তিনি জানান,”আমি সিঙ্গাপুর থাকার সময় এ খামারটি সম্পর্কে জানি। আমার এলাকায় ডেইরি ফার্ম এবং একটি সমন্বিত খামার করার পরিকল্পনা আছে।তাই এ খামারটি দেখে বাস্তবিক অভিজ্ঞতা অর্জন করে,সেখানে প্রয়োগ করতে পারব।পাশাপাশি এ মাল্টিফার্মের সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে।”
বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ মাল্টিফার্মটি একসময় নামকরা পর্যটনস্পট হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন এর স্বপ্নদ্রষ্টা মঈন উদ্দিন। তিনি বলেন,”২০০৬ সালে অনেকটা শখের বসে এবং মাতৃভূমিতে কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে এ মাল্টিফার্মটি গড়ে তুলি। এতে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হলো,পাশাপাশি মানুষের পরিবার পরিজন নিয়ে ঘোরার মত জায়গাও হলো,পাশাপাশি আমাদের পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পর্কে মানুষ আরো বেশি জানলো। আমি এটিকে আরো আধুনিকায়ন করে একটা দারুণ পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।এরই মধ্যে এর কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। দর্শনার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা চিন্তা করে একটি রাস্তা করা গেলে আমরা আরো উৎসাহিত হতাম এবং এটিকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতাম।”
হিলসডেল মাল্টিফার্মে যে কেউ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারেন এবং মায়াবী চিত্রাহরিণ একেবারে কাছ থেকে দেখতে পারবেন।
যেভাবে যেতে হবে
দেশের যে কোন স্থান থেকে বাসযোগে চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট পৌরসভায় নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি যোগে করেরহাট বাজার যেতে হবে। তারপর সিএনজি যোগে যেতে হবে পশ্চিম অলিনগর হিলসডেল মাল্টিফার্মে।
থাকা-খাওয়া
বারইয়ারহাট পৌরসভায় কাশবন, গ্রীণ পার্ক, আলিফ নামে ভালো রেষ্টুরেন্ট রয়েছে। তবে থাকার জন্য এখানে ভালো আবাসিক হোটেল না থাকলে বারইয়ারহাট থেকে ১ ঘন্টার পথ চট্টগ্রাম শহরের শুরুতে একেখান মোড়ে রয়েছে মায়ামী রিসোর্ট ও অলংকার মোড়ে রয়েছে হোটেল রোজভিও।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমইউ