এম মাঈন উদ্দিন, সীমান্ত হাট থেকে ফিরে
আমাদের দেশে অনেকে আছেন যারা ভারতীয় পণ্য পছন্দ করেন। আবার অনেক ভারতীয় আছেন বাংলাদেশের পন্য পেলেই আনন্দের মেতে উঠেন। সে সকল মানুষের মিলনমেলা ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় অবস্থি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বাজার। আপনি চাইলে ভারতীয় যেকোন পন্য অনায়াশে কিনতে পারবেন। আর তার জন্য প্রয়োজন হবে জাতীয় পরিচয়পত্র। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ২০ টাকা মূল্যে টিকেট নিয়ে বাজারে প্রবেশ করতে হবে। বাংলাদেশিরা তাদের ভোটার আইডি কার্ড দেখিয়ে নির্দিষ্ট রেজিষ্ট্রারে নাম, বয়স ও স্বাক্ষর করে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে জন্ম নিবন্ধন কিংবা বিদ্যালয়ের আইডি কার্ড দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। মিরসরাইয়ের সীমান্তবর্তী করেরহাট ইউনিয়নের পাশবর্তী ছাগলনাইয়ার রাধানগর গ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ ভারতের তৃতীয় সীমান্তহাট। সপ্তাহের মঙ্গলবার হাট বসে। হাটে রয়েছে দুই দেশের ৫০টি দোকান।
মঙ্গলবার সরেজমিনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হাটে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে দু’দেশের শত শত মানুষ ওই হাটে বিকিকিনি করছে। কেউ পণ্য দেখছে, কেউ ঘুরে ঘুরে সেলফি তুলছে। যেন একটি পর্যটন এলাকা। বাংলাদেশিরা হিন্দিতে কথা বলে ভারতীয়দের সাথে ঠাট্টা করছে। ভারতীয়রাও খুব আনন্দের সাথে তা গ্রহণ করছে। ৫০টি দোকানের মধ্যে ২৫টি বাংলাদেশে। অন্য ২৫টি ভারতীয়দের। তবে ভারতীয়দের দোকানে বিকিকিনি বেশি দেখা গেছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা মাছ, শুটকিসহ বিভিন্ন দেশিয় পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। ভারতীয় দোকানে বেশি বিক্রি হচ্ছে শিশুদের প্রেমপাস, হরলিক্স, জিরা, চা-পাতা। কেহ চাইলে টাকা বাট্টা করে নিতে পারে বাজারের ভেতরে অবস্থিত মানি এক্সচেঞ্জ অফিসে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হাটে কঠোর নিরাপত্তা রয়েছে। বাংলাদেশ গেইটে দায়িত্ব পালন করছেন বিজিবি ও ভারতীয় গেইটের দায়িত্বে রয়েছে বিএসএফ।
জানা গেছে, যে কোন বাংলাদেশি সর্বোচ্চ ১০০ শ’ ডলার পর্যন্ত কেনা বেচা করতে পারবেন। সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার এই হাট বসবে। উভয় দেশের সীমান্তে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারীদের মাঝে দোকানগুলোর বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এখানে সব ধরনের বাংলাদেশি ও ভারতীয় পণ্য পাওয়া যায়।
আর এগুলো কিনতে ভারতীরা তাদের দেশীয় রুপি দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য কিনতে হবে। আর বাংলাদেশিরা স্বদেশীয় টাকা দিয়ে ভারতীয় পণ্য কিনতে হবে। টাকার মানের মধ্য কিছুটা ব্যবধান রয়েছে। যেমন যে পণ্যটি ভারতীয় ৩০০ টাকা তার জন্য বাংলাদেশী টাকা দিতে হবে ৪০০ টাকা। ভারতের শ্রীনগর থেকে আসা বিক্রেতা পিযূষ দাশ বলেন, বিকিকিনি মোটামুটি ভালোই হচ্ছে। তার দোকানে শিশুদের প্রেমপাসের চাহিদা বেশি রয়েছে। ৯-১৪ কেজি ওজনে ৪৮ পিস প্রেমপাস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায়।
আরো জানা গেছে, অনেক ভারতীয় বাংলাদেশে থাকা তাদের আত্মীয়দের দেখতে সীমান্ত বাজারে এসে থাকে। এতে করে দুই দেশের মানুষের মধ্যে একটি সেতু বন্ধন সৃষ্টি হচ্ছে। দৈনিক প্রায় ১০-১৫ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র গুলো নিশ্চিত করেছে। হচ্ছে।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, সীমান্ত হাটে বিকিকিনি ভালো হয়। তবে ভারতীয় অনেক পণ্য মেয়াদত্তীণ বলে তিনি অভিযোগ করেন।
উল্লেখ্য: গত ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারী মঙ্গলবার দুপুরে দু’দেশের মধ্যকার এই হাটটি, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও ভারতের বানিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতা রাম, হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণসহ দুই দেশের একাধিক এমপি, সচিব ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে এ হাট উদ্বোধন করেন। মঙ্গলবারে বাজারটি উদ্বোধন করায় প্রতি মঙ্গলবার হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমইউ