মোঃ কামরুল হাসান, রামগড় থেকে ফিরে>>
সবজি চাষই তাদের একমাত্র ভরসা। সবজি চাষ করেই জীবন চলে ইউসুফ সহ আরো অনেকের। ফসল উৎপাদনের পর চাষীরা সবজিগুলো গাড়ি করে নিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরন করে হেঁয়াকো বাজার, রামগড়, খাগড়াছড়ি, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, করেরহাট, বারৈয়ারহাট, চট্টগ্রাম, ফেনী সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা রামগড় উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চল আঁধার মানিক গ্রামের মৃত শেখ আহাম্মদের ছেলে সত্তোরর্ধ ইউসুফ মিয়া ৩০ হাজার টাকা দিয়ে অন্যের ১শ’৪০ শতক জায়গা বর্গা নিয়ে বেগুন, টমেটো, কাঁচা মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, মিষ্টি লাউ, আলু, তিতা করলা, ফুলকপি, মিষ্টি করলা, পুঁইশাক, বরবটি চাষ করেছেন। তিনি এই জমির মধ্যে মিষ্টি আলুতে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে বিক্রি করেন ৪০ হাজার টাকা, মিষ্টি কুমড়ায় ১৫শ টাকা খরচ করে ৭ হাজার টাকা বিক্রি করেন, ফুলকপিতে ৯ হাজার টাকা খরচ করে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করেন, পুঁইশাকে ১শ’৫০ টাকার বিচি লাগিয়ে পুঁইশাক বিক্রি করেন ৭ হাজার টাকার, আরো ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকার পুঁইশাক বিক্রি করার সম্ভাবনা রয়েছে। বরবটি ২শ’ টাকার বিচি লাগিয়ে ৮ হাজার টাকা বিক্রি করেন। তিতা করলায় ১শ’২০ টা চারা লাগাতে খরচ হয় ৫শ’ টাকা। বিক্রি করেন ২২ হাজার টাকা, আরো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি করার আশা প্রকাশ করেন। টমেটোর ৬শ’ চারা ৩ হাজার ৫শ’ টাকায় লাগিয়ে এ পর্যন্ত বিক্রি করেন ৭ হাজার টাকার, আরো ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। বেগুনের ৩ শতাধিক চারা ১৫’শ টাকায় লাগিয়ে সাড়ে ৬ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেন। কাঁচা মরিচ এ পর্যন্ত ১শ’ ২০ কেজি বিক্রি করেন ৪ হাজার ৮শ’ টাকায়, আরো ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার কাঁচা মরিচ বিক্রি করার আশা প্রকাশ করেন। চারা ও ফসলকে পোকা দমনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ওষুধ হিসেবে কার্টাপিড ও সিয়েনা এবং ইউরিয়া, লাল সার, জিপসাম সার ব্যবহার করেন।
সেখানে আরো কথা হয় মোঃ শাহাজান’র সাথে। তিনি ১৫ বছর ধরে অন্যের ৩২ শতক জায়গা বছর প্রতি ৬ হাজার টাকা দিয়ে বর্গা নিয়ে সবজি চাষ করেন। নতুন ফেনী’র এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে শাহাজাহান জানান, তার ৩২ শতক জমির মধ্যে ৩৬’শ দেশীয় জাতের মরিচের চারা লাগাতে খরচ হয় ৮ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত মরিচ বিক্রি করেন ১২ হাজার টাকার। রমজান মাস পর্যন্ত আরো ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার বিক্রি করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফুলকপিতে ২ হাজার টাকা খরচ করে বিক্রি করেন ১১ হাজার টাকা। ৩ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে কোন রকমে দিন যাচ্ছে তার।
সবজি চাষ নিয়ে মোঃ ইউসুফ মিয়া নতুন ফেনী’কে বলেন, তার পূর্ব পুরুষদের এই পেশা ধরে রাখতেই তিনি সবজি চাষ করেন। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে তিনি পড়াশুনা করতে পারেনি। গত বছর একই জমি থেকে সতিনিব ফসল বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় করে স্ত্রী, ৪ ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে অনেক সুখেই দিন কাটছে তার। ১ ছেলে ও ১ মেয়েকে সবজি চাষ করে বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছেন। বাকিরা পড়াশুনা করছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকার কৃষকদের জন্য বিনামূল্যে সার, বীজ অন্যান্য উপকরন দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোন ধরনের সহযোগীতা পাইনা। আমাদেরকে কেউ দেখতেও আসেনা।
স্থানীয় বাসিন্দা ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজ বিএনসিসি ক্যাডেট তারেক ও জহির উদ্দিন নতুন ফেনী’কে বলেন, ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে ফেনী নদীর দু-পাশে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানুষের একমাত্র ভরসা এই সবজি চাষ। এখানকার শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ সবজি চাষ করেই তাদের জীবন অতিবাহিত করছে। পাইকারি বিক্রেতারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করেন। এই অঞ্চলের খেটে খাওয়া কৃষকরা উপজেলা কৃষি অধিদফতর থেকে কোন ধরনের সাহায্য সহযোগীতা পাননা। যদি তাদেরকে বিনামূল্যে সার, বীজ, ওষুধ এবং সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও ভালো ফলন উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করা যায় তাহলে কৃষকরা প্রতি বছর ভালো সবজি উৎপাদন করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমকেএইচ







