নতুন ফেনী ডেস্ক>>
এবার মহেশখালীতে নির্মিত হচ্ছে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল। দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধিকে সামনে রেখেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশ জাতীয় গ্রিডে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) যুক্ত করার জন্য প্রস্তুত। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এই অবকাঠামোটি উদ্বোধন করা হবে এবং সেই সপ্তাহে জাতীয় গ্রিডে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

মহেশখালী টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পাইপলাইনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এক্সিলারেটর এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের (ইইবিএল) মাধ্যমে বাস্তবায়িত ভাসমান টার্মিনাল থেকে এই গ্যাস গরম করে প্রাকৃতিক গ্যাসে রূপান্তরিত করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি এই ভাসমান কোম্পানিটি স্থাপন করবে কক্সবাজারের মহেশখালিতে এবং আগামী ২৩ এপ্রিল ভাসমান টার্মিনালটি বাংলাদেশে এসে পৌঁছবে। এলএনজি আমদানির জন্য কাতারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এছাড়াও ওমান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গেও জি-টু-জি ভিত্তিতে এবং স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, কুতুবদিয়া ও পায়রা এক বা একাধিক স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে জানা যায় যে জাতীয় গ্রীডে এলএনজি যুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেট্রোবাংলার আওতাধীন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মধ্যে তিতাস, কর্ণফুলী, বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ২৩৯০টি নতুন শিল্প-কারখানায় নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে।

সরকার আগামী দুই মাসের মধ্যে অনুমোদিত ২৩৯০ টি শিল্প কারখানায় নতুন করে গ্যাস সংযোগ দিবে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন এই মুহূর্তে দেশীয় আমদানিকৃত গ্যাস প্রাথমিক ভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠানে সংযোগ দেয়া হবে। ২০১৮ সালের চাহিদা মোতাবেক গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হলে দেশে প্রায় ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং জিডিপি বৃদ্ধিতে সরাসরি ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন এবং মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় দেশের শিল্পায়ন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ সব ক্ষেত্রে এ গ্যাস সরবরাহ নতুন মাত্রা যোগ করবে।

চলতি বছরের মে থেকে ইইবিএলের টার্মিনাল থেকে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ এমটিপিএ এলএনজি আমদানি করে রি-গ্যাসিফিকেশনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর সামিটের টার্মিনাল থেকে চলতি বছর শেষে ৩ দশমিক ৭৫ এমটিপিএ এলএনজি রি-গ্যাসিফিকেশন করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ আগামী বছর নাগাদ এ দুটি টার্মিনাল থেকে সাড়ে ৭ এমটিপিএ এলএনজি আমদানি করে তা রি-গ্যাসিফিকেশনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

পেট্রো বাংলা সূত্রে জানা যায় যে এলএনজি আমদানি ও রি-গ্যাসিফিকেশনের জন্য রি-ভলভিং ফান্ড হিসেবে ৮৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে এলএনজির এলসিতে ৩ কোটি ডলার, ল্যাটেন্ট হিট ক্যাপচার সিস্টেমের (এলএইচসিএস) জন্য ১ কোটি ৪২ লাখ ডলার এবং এলএনজি আমদানি ও পরিচালনার জন্য রি-ভলভিং ফান্ড হিসেবে এসবিএলসিসহ প্রয়োজন হবে আরও ৮০ কোটি ডলার।

আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী এলএনজিতে মিথেনের পরিমাণ ৮৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ইথেন ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, প্রপেন ২ দশমিক ১৬ শতাংশ ও বিউটেন ১ দশমিক ১২ শতাংশ। আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাসের মান নিশ্চিতকরণে তিনটি টিম কাজ করবে এবং এগুলো হল ক্রেতা পেট্রোবাংলার পক্ষে একটি, বিক্রেতা রাশগ্যাসের পক্ষে একটি ও অন্যটি ক্রেতা-বিক্রেতার সমন্বয়ে একটি স্বাধীন কমিটি।

প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণত চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে যা শীতলীকরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে তা তরলে পরিণত হয়। এবং এই তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকেই লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজি বলা হয়। সাধারণত, একটি জাহাজে দুই থেকে আড়াই হাজার মিলিয়ন বা ২০০ থেকে ২৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আনা সম্ভব।

প্রকৃতপক্ষে, দেশের জ্বালানি খাতকে সমৃদ্ধ করে এই ধরণের পদক্ষেপ বাংলাদেশকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে অনন্য ভূমিকা রাখবে । সেই সাথে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের ফলে দেশে গ্যাসের চাহিদা মিটবে। শিল্প কারখানায় উৎপাদন আগের থেকে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনএইচ

আপনার মতামত দিন