এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই থেকে>>
একটি লাঠি আর একটি বাঁশি দিয়েই ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ পাহারা দিচ্ছেন আনসার সদস্যরা। নাশকতামুলক কর্মকান্ড নসাৎ করার লক্ষ্যে রেলপথে আনসার সদস্য নিয়োগ করা হলেও তাদের কাছে নেই নাশকতা এড়াতে প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র। ফলে কোনভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না নাশকতা। তাছাড়া এদের অধিকাংশই স্থানীয় হওয়ায় ঠিকমতে নিজ দায়িতে দায়িত্ব পালন করেন না। আর দায়িত্ব পাওয়া বেশীর ভাগ আনসার সদস্যই জড়িত জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সাথে। ফলে এ যেন শষ্যের ভেতর ভূত। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের নিরাপত্তায় এবং নাশকতা মুলক কর্মকান্ড এড়ানোর জন্য জানুয়ারী মাসের শুরু থেকে মিরসরাইয়ে আনসার সদস্য নিয়োগ করা হয়। কিন্তু আনসার সদস্য নিয়োগ করা হলেও গত ২ ফেব্রুয়ারী মিরসরাইয়ের আমবাড়িয়া এলাকায় ১শ’ ২৬ ফুট রেল লাইনের ৯০টি প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে পেলে দুর্বৃত্তরা। ওই রাতে আমবাড়িয়া অংশের আনসার সদস্যরা থাকলেও তারা ধরতে পারেনি নাশকতাকারীদের। নাশকতাকারীরা রেললাইনের প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে ফেললেও তারা রেল লাইন না ফেলাতে উল্টে যায় চট্টগামগামী ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ট্রেনটি। ঘটনার পরদিন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, যারা প্যান্ডেল ক্লিপ খুলেছে তারা অনেক প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ। এরা অল্প সময়ের মধ্যে ৯০টি প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে ফেলেছে। এসময় একশ থেকে দেড়শ নাশকতাকারী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে পারে বলে তারা জানান। রেলওয়ের নিরাপত্তার কাজে জড়িত আনসার সদস্যদের হাতে নাশকতাকারীরা ধরা না পড়ায় তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন। এরআগে ২০১৪ সালের উপজেলার গড়িয়াইশ এবং ২০১৩ সালে দক্ষিণ আমবাড়িয়ায়ও একই ভাবে ট্রেনে নাশকতা চালানো হয়। ওই সময়ও রেল লাইনের নিরাপত্তায় আনসার নিয়োজিত ছিল। আনসার সদস্যরা নিরাপত্তার কাজে জড়িত থাকলেও তাদের নিজেদেরই নেই কোন নিরাপত্তা। নাশকতাকারীরা যদি এক সাথে ৫০-৬০ জন আসে তাহলে তাদের কাছে কিছুই না ওই কথিত নিরাপত্তকর্মীরা। নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য একজন আনসার সদস্যকে দেওয়া হয় ৩২০ টাকা। আর প্লাটুন প্রধান কে দেওয়া হয় ৩৫০ টাকা। আনসার সদস্য সংকটের কারণে রেল লাইনের পাশ্ববর্তী এলাকার লোকদেরকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে নিরাপত্তা। মজুরী কম হওয়ায় বয়স্ক লোক ছাড়া যুবক বা কম বয়সী কেউ এ কাজ করছে না।
আমবাড়িয়া এলাকায় নিরাপত্তার কাজে জড়িত আনসার সদস্য সুরেন্দ্র জানান, আমাদেরকে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হলেও আমাদের কাছে কোন অস্ত্র কিংবা প্রশিক্ষণ না থাকায় আমরা সার্বক্ষণিক আতঙ্কে থাকি কখন কি হয়। আমাদেরকে যদি প্রশিক্ষণ বা নাশকতা এড়ানোর জন্য অস্ত্র দেওয়া হয় তাহলে আমরা সদা প্রস্তুত রেল লাইনে নাশকতা এড়াতে।
কশম ত্রিপুরা জানান, রেল লাইন নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমাদের দৈনিক ৩২০টাকা বেতন দেওয়া হয়। হরতাল-অবরোধে তেমন কাজ নেই তাই এখানে পাহারা দিচ্ছি। আমাদেরকে শুধু একটি লাল ও একটি সবুজ পতাকা, একটি ড্রেস, একটি বাঁশি দেওয়া হয়েছে। এগুলো দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য কাজ করা যায়। কিন্তু কেউ লাইন খুলতে এলেতো আমরা তাদেরকে এগুলো দিয়ে মোকাবেলা করতে পারবনা।
উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, রেল লাইন নিরাপত্তায় উপজেলায় ১৪টি পয়েন্টে ৮ জন করে আনসার সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ দিন এবং ৪২ দিনের প্রশিক্ষিত আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে প্রত্যেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের দায়িত্বে অবহেলার কোন সুযোগ নেই। তাদের প্রধান কাজ হলো সার্বক্ষণিক রেললাইনের লাইন চেক করা। কোন নাশকতা মুলক কাজ দেখলে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি, বিজিবি প্রধানকে তাৎক্ষণিক ফোন দিয়ে জানিয়ে দিবে।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমইউ
মিরসরাইয়ে লাঠি-বাঁশি দিয়েই ৩৭ কিলোমিটার রেললাইন নিরাপত্তা!







