কেউ একটি জমি কেনার পর তিনটি ধাপ পার হলে জমিটির চূড়ান্ত মালিক হিসেবে নির্ধারিত হন। এর প্রথমটি হচ্ছে দলিল রেজিস্ট্রেশন, দ্বিতীয়টি নামজারি (মিউটেশন), তৃতীয়টি রেকর্ড অব রাইটস (আরওআর)। অনেকে দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পরই জমি তাঁর হয়ে গেছে বলে মনে করেন। কিন্তু নামজারি এবং আরওআর করতে অনেক ঝামেলা ও দেরি হওয়ায় অনেকে খবর নেন না। আর এসব বিষয় নিয়েই তৈরি হয় জমির বিরোধ। বিরোধ গড়ায় মামলায়, তৈরি হয় সামাজিক বিশৃঙ্খলা। এক হিসাবে বাংলাদেশের মামলার মোট ৮৭ শতাংশের মূল কারণ ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ। এতে মামলাজট তৈরি হয় আদালতে। আর্থিক ক্ষতি হয় সংশ্লিষ্ট সবার।
এসব ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে ভূমি ব্যবস্থাপনায় নতুন কিছু করার চেষ্টা ছিল সরকারের। সেই চেষ্টার স্বপ্নের যাত্রা শুরু হয়েছে একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রেশন, নামজারি এবং আরওআর সমন্বিতভাবে হবে। এতে করে একজনের জমি আরেকজন রেজিস্ট্রি করতে পারবে না। ১৭ উপজেলায় হতে যাওয়া পাইলট প্রকল্পটি সফল হলে দেশব্যাপী চালু হবে এই সেবা। এতে সর্বোচ্চ আট দিনের মধ্যে নামজারি সম্ভব হবে। গতকাল সোমবার ‘জমি রেজিস্ট্রেশন ও নামজারি কার্যক্রম সমন্বয়সাধন’ সংক্রান্ত ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভা আশা করছে, সারা দেশে এই কার্যক্রম চালু হলে ৬০-৭০ শতাংশ মামলা কমে যাবে। সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নতিতে প্রভাব রাখবে এই উদ্যোগ।
নতুন ব্যবস্থাপনায় যা হবে
বিদ্যমান ব্যবস্থায় একটি জমির দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় জমিটি ঠিক কী অবস্থায় আছে তা সম্পূর্ণভাবে দেখতে পারে না রেজিস্ট্রি অফিস। অন্যদিকে জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর নামজারি করতে গেলে ভূমি অফিসে দীর্ঘসূত্রতায় পড়তে হয়। কারণ জমির দলিলসংক্রান্ত সব কাগজ রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ভূমি অফিসে না গেলে তারা উদ্যোগ নিতে পারে না। এভাবে সময় নষ্ট হয় বা গ্রাহকদের ঘোরার সূত্রে সংশ্লিষ্ট অফিসে ঘুষ গুনতে হয়। নতুন পদ্ধতি প্রবর্তিত হলে জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন করার সময় জমির আগের সব তথ্য এক ক্লিকেই দেখতে পারবে রেজিস্ট্রি অফিস। এরপর সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারির জন্য তৈরি হয়ে যাবে। গ্রাহক নামজারির আবেদন করলে ভূমি অফিস সেটি আট দিনের মধ্যে সম্পন্ন করে দিতে বাধ্য থাকবে। রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সম্পূর্ণ তথ্য অনলাইনে ভূমি অফিসকে দেওয়া থাকবে, তাই এই ক্ষেত্রে ভূমি অফিস সময়ক্ষেপণ করতে পারবে না।
যদি কোনো এসি ল্যান্ড সময়ক্ষেপণ করতে চান, তাহলে ডিসি অফিসের নজরদারিতে ধরা পড়ে যাবেন, যা তাঁর চাকরির অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। তাই এই ঝুঁকি কেউ নেবে না। সহজেই সেবা পাবে সাধারণ মানুষ। আর নামজারি হয়ে যাওয়ার পর এসি ল্যান্ডকে সংশ্লিষ্ট জমির বিষয়ে রেকর্ড অব রাইটসে (আরওআর) জমির নতুন মালিকের তথ্য আপডেট করতে হবে। জমির তথ্য জানার জন্য রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ভূমি অফিসের তথ্য জানার জন্য দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে সেই দাবি পূরণ হচ্ছে। কারো কারো দাবি ছিল, ভূমি অফিস ও রেজিস্ট্রি অফিস একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা হলে সমস্যার সমাধান হতো। নতুন পদক্ষেপ অনুযায়ী দুটি অফিস দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনেই থাকবে, তবে তারা পরস্পরের সঙ্গে সহজে তথ্য বিনিময় করবে।
সম্পাদনা:আরএইচ/এইচআর







