বাংলাদেশের অন্যতম একটি অগ্রসরমান জেলা ফেনী। এ জেলার মানুষ যেমন ভোজর রসিক, অতিথিপ্রিয়, রুচিশীল তেমনি উদ্যোগীও। পুরুষের পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছে এ জেলার নারীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই হয়েছেন। তেমনই একজন নারী উদ্যোক্তা ‘ফারজানার মসলা ঘর’ ও ‘মিস ওয়ারড্রব’ এর স্বত্ত্বাধিকারী ফারজানা হক। আজকে শুনবো তার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প।
ফারাজানা সবসমই চেয়ে ছিলো নিজে কিছু করতে,নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে। ছিলেন উই গ্রুপের সদস্য, সেখান থেকেই তার উদ্যোক্তা জীবনের পরিকল্পনা শুরু। ই -ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা রাজীব আহমেদের অনুপ্ররেণা পেয়েই নিজকে উদ্যোক্তার খাতায় নাম লিখিয়েছেন তিনি। গ্রুপের পোষ্ট গুলো দেখে কি পণ্য নিয়ে ব্যাবসা করবে সে সম্পর্কে ধারনা নেন।

ফারজানা বলেন, উই গ্রুপের পোস্টগুলো দেখে আমি প্রথমে চিন্তা করলাম কি নেই সেখানে যা নিয়ে আমি কাজ করতে পারি। নিজেকে আলাদা ভাবে উপস্থাপন করতে পারি। কি পন্য নিয়ে কাজ করলে সবার কাজ পরিচিতি পাবো সেগুলো আমার মাথায় ঘুরতে থাকে। পরে ঠিক করলাম আমার রান্নার প্রতি ঝোঁক আছে। মোটামুটি সব রান্নাই পারি। নতুন নতুন আইটেম গুলোও আয়ত্ত করতে খুব একটা সময় লাগেনা। নিজের হাতে মজার মজার খাবার তৈরী করি। রান্নার প্রয়োজনীয় উপাদান স্পেশাল মসলাগুলো আমি নিজের হাতে বানিয়ে রান্নায় ব্যবহার করতাম। এতে আলাদা একটা স্বাদ থাকতো। খাঁটি মসলার অন্যরকম একটা ঘ্রাণ খাবারের সাথে মিশে যেত। যেটা সবাই খুব পছন্দ করতো। সেই চিন্তা থেকেই মসলা নিয়ে কাজ করার আইডিয়া মাথায় আসে।
তিনি জানান, আমি যেহেতু হাতের তৈরি মসলা বিক্রি করি তাই সেই অনুযায়ী আমার নামের সাথে মিল রেখেই পেজের নাম রাখি ‘ফারজানার মসলা ঘর’। যাতে করে সবাই সহজে বুজতে পারে আমার পেজে কোন ধরনের আইটেম পাওয়া যাবে। আর শাড়ির পেইজ ‘Mi’s wardrobe’ আমার নামের সংক্ষিপ্ত রূপ থেকেই আসে।

ফারজানার তৈরী মসলা…
ব্যাবসার অগ্রগতি সম্পর্কে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ মানুষ আমার প্রতিষ্ঠানকে খুব আন্তরিকতার সাথেই গ্রহন করেছে। এই পযর্ন্ত ৪৬ টা জেলায় আমার মসলা এবং শাড়ি পৌঁছেছে। সবাই খুব ভালো রিভিউ দিয়েছে এবং প্রসংসা ও করেছে। ফেনীর মধ্যেও আমার অনেক নিয়মিত ক্রেতা রয়েছেন যারা আমার থেকে সবসময় মসলা এবং শাড়ি নিয়ে থাকেন।
ভবিষৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, আপাতত স্বপ্ন হলো নিজের প্রতিষ্ঠানকে আর ও বড় করে, কাজগুলোকে আরও গুছাতে চাই। ভূলএুটি গুলো সংশোধন করে দেশীয় পন্যে নিয়ে কাজ করবো। আমার প্রতিষ্ঠান অনলাইন, অফলাইনে পরিচিত করতে চাই।
আমি প্রথমে হাতে বানানো স্পেশাল ১৬ রকমের মসলা নিয়ে কাজ শুরু করি। পরে সাথে যুক্ত করেছি ক্লথিং আইটেম। দেশীয় সব শাড়ি, থ্রি পিচ এবং বাচ্চাদের বাহারী রকমের শাড়ি। এ প্রতিষ্ঠািন থেকে গ্রাহকরা খাটি এবং ভেজাল মুক্ত মসলা গুলো পাচ্ছেন, এবং আমার স্পেশাল ১৬ রকমের মসলা যেমন: বিরিয়ানী মসলা, তেহারী মসলা, কাবাব মসলা, রোস্ট মসলা, তন্দুরী মসলা, চটপটি মসলা, গরম মসলা, চাট মসলা, মেজবানী মসলা, কালাভুনা মসলা, মাংসের মসলা, হালিম মসলা, স্পেশাল মাছের মসলা, আচার মসলা, নেহারী মসলা, হাঁসের মসলা। এই মসলা গুলো আমি ২০ থেকে ২২ রকমের গোটা মসলা দিয়ে তৈরী করে থাকি।
প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে বলেন, এখন পযর্ন্ত বাইরের প্রতিবন্ধকতার চেয়ে নিজে ব্যক্তিগত ভাবে প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হয়েছি। কারন সংসার,বাচ্ছা সবকিছু সামলিয়ে ব্যবসা করাটা অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং ছিলো। সংসারের নিয়মিত কাজ সেরে মসলা তৈরী করা,পন্যের ফটোগ্রাফি করা, মার্কেটিং, পার্সেল রেড়ি করা,অর্ডার নেওয়া সবকিছু নিজেকেই সামলাতে হয়। দিনরাত অনলাইনে পড়ে থাকতে হয়। শেষ রাতে ঘুমোতে হয় প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম শেষ করে। অনেক ধৈর্য্য, সময় পরিশ্রম করে নিজের কাজ ঠিক রাখতে হয়। তারপরও বলবো আলহামদুলিল্লাহ । নিজের কাজকে এগিয়ে নিচ্ছি, ৬৪ জেলায় পরিচিতি পাচ্ছি এবং পন্য পৌঁছাতে পারছি।
‘উই’ গ্রুপের মত বিশাল প্লাটফর্মে লাখপতি হতে পেরেছি এতেই অনেক খুশি আমি।

স্বামী, সন্তানসহ ফারজানা…
আমার উদ্যোগে সবচেয়ে বেশি সহযোগীতা করেছেন আমার স্বামী। প্রথম থেকে শুরু করে ব্যবসা, পেজ সংক্রান্ত যতগুলো ফরর্মালিটি ছিলো সবকিছু তিনিই করে দিয়েছেন। তখন কিন্তুু আমি এই কাজগুলো সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। এছাড়াও আমার পন্যের উৎস, কাঁচামাল সংগ্রহ, ডেলিভারি সিষ্টেম সব কাজেই তার সহযোগীতা পেয়েছি। অর্থনৈতিক ভাবেও বিশাল একটা সাপোর্ট আমার স্বামীর কাছ থেকে পেয়েছি। এছাড়া ও আমার পরিবার, বাবা, মা, বোন, শশুর, শাশুড়ি সবাই সাপোর্ট করেছেন। কাজে উৎসাহ দিয়ে মানসিক ভাবে সহযোগীতা করেছেন।
নিজের জমানো ১৫০০ টাকা দিয়ে শুরু করে বর্তমানে আমার ৮০ থেকে এক লক্ষটাকার মত পুজিঁ আছে। উদ্যোক্তা হিসেবে আমার প্রায় একবছর পূর্ণ হবে এবার, এতো কম সময়ে ও যে সবার মনে জায়গা করতে পেরেছি এটার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রত্যেক মানুষের কিছু না কিছু গুন থাকে, আপনি আপনার সেই গুনটাকে খুজেঁ বের করুন, কোন কাজে আপনার ভালোলাগা, ভালোবাসা কাজ করে তা বের করার চেষ্টা করুন। এবং সেই অনুযায়ী নিজের কাজ নির্বাচন করে ধৈর্য্য ধরে, সততার সঙ্গে পরিশ্রম করে এগিয়ে যান। সাফল্য আসবেই।
সম্পাদনা:আরএইচ/এইচআর







