মু. আতাউর রহমান।
সম্প্রতি পাশ্ববর্তী দেশ মায়ানমারে রাখাইনে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি নিধনে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে৷এমতবস্থায়, বাংলাদেশের কিছু মানুষ থেকে একটি দাবি উঠছে রোহিঙ্গাদের জন্য অবাধে সীমান্ত খুলে দিয়ে তাদের আশ্রয় প্রদানের। এবং সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় মানবিক দিক বিবেচনায় আশ্রয় ও দেয়া হচ্ছে৷কিন্তু এটি কি অদৌ কোন সমাধান?
মুসলিম নয় শুধু যে কোন মানুষ হত্যা অবশ্যই নিন্দনীয়, তাই আমরা প্রতিবেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠির পক্ষ থেকে বার্মা সরকারের প্রতি চাপ প্রয়োগে সহায়তা করতে পারি। জাতিসংঘের প্রতি দাবি জানাতে পারি। কিন্তু আমাদের মত একটি দরিদ্র দেশের পক্ষে এ বিশাল পরিমান শরনার্থী জায়গা দেয়াটা খুবই দুঃসাধ্য বিষয়। যেখানে ইউরোপের উন্নত দেশগুলো সিরিয়ার শরনার্থীদের আশ্রয় দিতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে, জাতিসংঘ নির্বিকার,মুসলিম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো নিরব, (তুরস্ক, ইন্দোনিশিয়া, মালশিয়া, মালদ্বীপসহ গুটিকয়েক রাষ্ট্র ব্যতিত) সেখানে আমরা তৃতীয় বিশ্বের একটি দারিদ্রপিড়িত দেশ হিসেবে কিইবা করতে পারি?
বার্মা সরকারকে যেখানে পশ্চিমা ও ভারতীয় শাসকবর্গ পরোক্ষভাবে সমর্থন যোগাচ্ছে সেখানে আমরা আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব-দানবদের চক্ষুশূল হলে অন্যের উপকার করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করব কিভাবে? মনে রাখা ভাল, তাবৎ দুনিয়ার সব মুসলিম বিদ্বেষীরা আদতে এক! একদিক দিয়ে মানবতার বুলি আউড়ালেও তারাই সবছেয়ে বেশী মানবতাবিরোধী কাজে জড়িত৷ জাতিসংঘ বাংলাদেশকে শরণার্থীদের আশ্রয়ের আহবান জানাতে পারল! কিন্তু হত্যাযজ্ঞ বন্দে বার্মা সরকারের উপর কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিতে পারল না! কি মচৎকার কূট-রাজনীতি!
পূর্ব তিমুর, দ: সুদানের গুটি কয়েক ক্যাথলেটিক নিহতের পরই তাদের স্বাধীন করে দেয়া হল। ফিলিস্তিন, কাস্মীর হাজারো শহীদ হলেও কথিত বিবৃতির বাইরে আর কিছুই নেই! সচেতন মানুষের কি বুঝার বাকি আছে, রোহিঙ্গা, কাস্মীরি আর ফিলিস্তিনি একই সূত্রে গাঁথা?
অর্থাৎ,যেখানে বিশ্ব মোড়লরা এই ইস্যুতে একই সূত্রে গাঁথা সেখানে বাংলাদেশ (যেখানে স্বদেশীদের মানবাধিকার বিপন্ন) রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য আশ্রয় দিতে গেলে যেমন বার্মা ও ভারত সরকারের বিরাগভাজন হতে হবে তেমনি বিশ্ব-দানবদেরও। পাশাপাশি এ বিশাল জনগোষ্ঠির খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা সেবাসহ সার্বিক বিষয়ে ব্যাবস্থহা করাও এক রকম অসম্ভব।
মুসলিম হিসেবে তাদের প্রতি সহমর্মিতার পাশাপাশি ঐ সরকারের কাছে জোর প্রতিবাদ ও হত্যা বন্দের দাবি জানাতে পারি। তাবৎ বিশ্ব মুসলমানের সাথে এক হয়ে তীব্র প্রতিবাদ পর্যন্ত গড়ে তুলতে পারি৷ কিন্তু এর চেয়ে বেশী আশা করাটা কেবল আবেগ প্রসূত চিন্তা চেতনা ছাড়া কিছুই নয়৷
মনে রাখা দরকার,একটি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং বিশ্ব রাজনীতি অন্তত আবেগ দিয়ে চলে না৷আমার বিশ্বাস এই বিষয়টি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে ভাল কেউ বুঝে না৷তাই মনে হচ্ছে এখনো পর্যন্ত সরকার প্রধান রোহিঙ্গ্ ইস্যুতে খুব কৌশলী অবস্হানে আছেন৷বিএনপি’র মত অনেক বিরোধীদল সবকিছুতেই যেমন সরকারের বিরোধিতা করেই থাকেন এ জাতীয় একটি আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও সরকারের বিরোধিতাই করে যাচ্ছেন৷এটি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য শুভ লক্ষন নয়। তবে সবছেয়ে আশ্চার্যের বিষয় বিএনপি মার্কা যে সব দল বিরোধিতা করে যাচ্ছেন রোহিঙ্গাদের কল্যানে এখনো পর্যন্ত তাদের প্রত্যক্ষ কার্যকরী কোন কর্মসূচি চোখে পড়ে নি৷তবে এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রমী ভূমিকায় দেখা গেল দেশের সর্ব বৃহৎ ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীকে৷তারা এই ইস্যুতে বর্তমান সরকারের গৃহীত ভূমিকায় সাধুবাদ দিয়ে মিডিয়ায় বিবৃতি দিয়েছেন,রাজপথে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন৷সূত্রমতে,সরকারের সাথে একাতœ হয়ে ত্রাণ তৎপরতাও চালিয়ে যাচ্ছেন৷এটি দেশের জন্য শুভ লক্ষন৷আবার অনেকেই শুধু মিডিয়া কাপানো মায়াকান্নার বক্তব্য দিয়েই ক্ষ্যান্ত!
এমতাবস্থায়, বিশ্বশক্তি এর সমাধানে আন্তরিক না হলে বাংলাদেশ তার সীমান্ত খুলে প্রায় দশ লক্ষাদিক শরনার্থীর বোঝা বয়ে সমধান অদৌ করতে পারবে কি? আমি ,আমরা সবাই চাই রোহিঙ্গা সমস্যার একটা সমাধান হোক৷তারা তাদের জন্মভূমির নাগরিকত্ব বুকে ধারন করে তাদের ভূমিতেই প্রতিষ্ঠিত হোক৷নিজের পরিচয়ের আগে শরণার্থী শব্দের প্রয়োগ না থাকুক৷এ জন্য প্রয়োজন সমগ্র বিশ্ব শক্তির সম্মিলিত প্রয়াস৷প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের প্রয়াসটা আমরা একটু বেশীই না হয় করে যাবো৷তবে তা অবাধে আশ্রয় দিয়ে নয়৷
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।