মো: কামরুল হাসান >>
ছাগলনাইয়া উপজেলার এক অনন্য ‘আলোক বর্তিকা’ মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। সুদীর্ঘ ১শ’ ১ বছর ধরে উপজেলায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে প্রতিষ্ঠনটি। এ প্রতিষ্ঠান থেকে জ্ঞানের দিক্ষা নিয়ে স্ব-মহিমায় অধিষ্ঠিত আছেন অনেকে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ৪.৪১ একর বিস্তৃত জমির উপর ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ছাগলনাইয়া মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান বিএ’র টিন-কাঠের ঝীর্ণ-শীর্ণ ক্যাম্পাসে এখন বেশ কয়েকটি সুরম্য ভবন। ১টি তিন তলা বিশিষ্ট ভবন, ২টি দো-তলা বিশিষ্ট ভবন, ১ টি করে একতলা ও ১টি আধাপাকা বিল্ডিংয়ে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই শিক্ষাঙ্গনে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগে প্রায় ৮শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাগলনাইয়া শিশু পরিবারের ৫৪ এতিম শিক্ষার্থী বিনা পয়সায় অধ্যয়ন করে আসছে। ১৭ জন শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে পরিচালিত হচ্ছে এর শ্রেণী কার্যক্রম। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয়ে ৮টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এটি স্কুলের শ্রেণী কার্যক্রম কিংবা স্কুল কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় বাঁধা হলেও ভাটা পড়েনি সাফল্যের ধারায়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কঠোর পরিশ্রমে এসব বাঁধা ছিন্ন করে এগিয়ে যাচ্ছে তার পাঠ্য কার্যক্রম এবং সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে।
শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে উৎসাহিত করে তুলতে রয়েছে সর্বাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব। প্রতি ব্যাচে ১৫ শিক্ষার্থী তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা নিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও শিক্ষকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে প্রতিনিয়ত স্কাউট, খেলা-ধুলা, শরীর চর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। পাঠ্য বইয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে এ প্রতিষ্ঠানে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরী রয়েছে।
বিগত কয়েক বছরের ফলাফলে দেখা যায়, ২০১০ সালে জেএসসি পরীক্ষায় ৮৮জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে শতভাগ পাস করার কৃতিত্ব অর্জন করে। ২০১১ সালে ৯০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ১জন জিপিএ-৫ সহ ৮৯ জন শিক্ষার্থী, ২০১২ সালে ৮৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৪জন জিপিএ-৫ সহ শতভাগ, ২০১৩ সালে ১শ’১১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ২জন জিপিএ-৫ সহ ১শ’ ১০ জন শিক্ষার্থী, ২০১৪ সালে ১শ’ ৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ১৫ জন জিপিএ-৫ সহ শতভাগ ও ২০১৫ সালে ১শ’৩৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ১৮ জন জিপিএ-৫ সহ শতভাগ পাস করার কৃতিত্ব অর্জন করে।
একই ভাবে ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ১শ’ ৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ সহ শতভাগ পাস করার কৃতিত্ব অর্জন করে এ প্রতিষ্ঠান। ২০১৩ সালে ১শ’ ৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ২১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ সহ শতভাগ, ২০১৪ সালে ১শ’১০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ২৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ সহ শতভাগ, ২০১৫ সালে ১শ’ ২০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ সহ ১শ’ ১৬ জন শিক্ষার্থী ও ২০১৬ সালে ১শ’ ২৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ২৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ সহ শতভাগ পাস করার কৃতিত্ব অর্জন করে।
সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৬ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: মোয়াজ্জেম হোসেন। এ ছাড়াও উপজেলায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শ্রেষ্ঠ স্কাউট শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ বিএনসিসি শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ বিএনসিসি ক্যাডেট, শ্রেষ্ঠ বিএনসিসি গ্রুপ, শ্রেষ্ঠ স্কাউট ক্যাডেট, শ্রেষ্ঠ স্কাউট গ্রুপ নির্বাচিত হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে স্কুলে ২৫টি সিসি ক্যামরা বসানো হয়েচে। এছাড়াও ৮০ লাখ টাকা ব্যায়ে একটি ছাত্রাবাস ও একটি এবাদত খানা নির্মাণের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। তিনি বিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধিতে এলাকার সকল মানুষকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমকেএইচ