বিশেষ প্রতিনিধি >>
ফেনীসহ সারা দেশে কাল থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে টানা ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে সরকারী ও আধা-সরকারী স্কুলগুলো ফলাফলে কিছুটা সম্মান ধরে রাখতে পারলেও বরারবই বাণিজ্যিক স্কুলগুলোর অবস্থা তথৈবচ। গুটি কয়েক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করতে পারলেও বেশিরভাগ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে হতাশার মধ্যে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের শুরুতে বাহারি বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করায় শহরের বাণিজ্যিক স্কুলগুলো। মোটা অংকের সেশন ফি, বেতন ও কয়েক ধরণের ফি হাতিয়ে নেয়ারপরও বাণিজ্যিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত ফলাফল অর্জনে ব্যার্থ হয়। এবারও সেই আশঙ্কাই করছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
শহরের বাণিজ্যিক স্কুলগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি স্কুল ফলাফলে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এদের মধ্যে হলিক্রিসেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবার ১শ’ ২৭জন পরীক্ষায় অংশ নেবে। গত বছর এখান থেকে ১শ’ ৩৫জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করে ১শ’১৫ জন। এদের মধ্যে ২৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেন। ফেনী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এবার ৩৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। গত বছর এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৩ জন পরীক্ষা দিয়ে ৩জন জিপিএ-৫সহ শতভাগ পাশ করে। ডেফোডিল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে এবার ৪৮জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গত বছর ৪৯ জন পরীক্ষা দিয়ে ৪০ জন শিক্ষার্থী পাশ করেন। এদের মধ্য থেকে ৫শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ লাভ করে। ফেনী সিটি গার্লস হাই স্কুল থেকে এবার ৫১জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। গত বছর এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৫১জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২জন জিপিএ-৫সহ শতভাগ পাশ করে। সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল থেকে এবার ৪৮জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। গতবার এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৫৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৫০ জন পাশ করে এবং স্টারলাইন স্প্রাউট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে এবার ৭জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা অংশ নেবে। গতবার এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৭জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সবাই গোল্ডেন এ+ অর্জন করে।
এছাড়াও শহরের অন্যান্য বাণিজ্যিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ফলাফলের অবস্থা খুবই হতাশাজনক। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের ভর্তি করিয়ে হতাশার মধ্যে থাকতে হয় অভিভাবকদের। একাধিক অভিভাবক তাঁদের দু:খ ও হতাশার কথা জানিয়ে বলেন, চটকদার বিজ্ঞাপন ও স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংগ্রহ করে মুনাফালোভী স্কুল মালিকরা। তাদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে-বুঝতে অনেক সময় চলে যায়। তখন কিছুই করার থাকে না। ফলে ফলাফল খারাপ করে নানা সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
জাহান আরা বেগম নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী নাম প্রকাশ না করে বলেন, নামের বাহার দেখে তাঁর ছেলেকে শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি স্কুলে ভর্তি করান। কিছুদিন যাওয়ার পর ছেলের লেখাপড়ায় অবনতি দেখে ওই স্কুল থেকে বাচ্চাকে সরিয়ে নেন। তিনি সংকীর্ণ শ্রেনীক্ষ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মানহীন শিক্ষকসহ এমন আরো অনেক অভিযোগ তুলেন বাণিজ্যিক এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে।
ফেনী কলেজিয়েট স্কুলে অধ্যক্ষ আবদুল বারেক অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, সব বাণিজ্যিক স্কুলের ফলাফল খারাপ এমনটা নয়। বেশ কয়েকটি স্কুল আপ্রাণ চেষ্টা করছে তাঁদের শিক্ষার্থীরা যাতে ভালো ফলাফল অর্জন করে। এদের দেখে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের শিক্ষার্থীদের দিকে নজর দিলে এ ধরণের অভিযোগ উত্থাপন হবে না।
এ বিষয়ে ফেনী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত নাথ বলেন, গত কয়েক বছর কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে ফলাফল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে হয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর রেজাল্ট কিছুটা নিন্মমূখী। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আন্তরিক হলে আরো ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনএনএন