এক সময় নিজ হাতে গাছ থেকে পেড়ে মালটা খাওয়া আমাদের কাছে স্বপ্নের মত মনে হলেও এখন সেটা আর স্বপ্ন নয়। পাহাড়ি জমিতে কমলার মত মালটা চাষে নিরব বিপ্লব ঘটেছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। গত ৫ বছরের ব্যাবধানে কয়েকশ বাগান গড়ে উঠেছে এ উপজেলাতে । তার মধ্য অন্যতম হেয়াকো-ফটিকছড়ি সড়কের গজারিয়া খালের পাশেই নিশ্চিন্তা গ্রামে অবস্থিত সমন্বিত খামার ‘ইউনুছ এগ্রো ফার্ম’ ফটিকছড়ি যাওয়ার পথে সড়কের পাশ দিয়ে যেতে চোখে পড়ে এ বাগান।
ফার্মের গেইট দিয়ে প্রবেশ করে দৃষ্টিনন্দন কাঠের সাঁকো পার হলেই রাস্তার দু’পাশে চোখে পড়ে মালটা গাছ। কাঁচা সবুজ, আধা-পাকা, সামান্য হলুদ আর পাকা হলুদ মালটায় ভরে গেছে গাছ। গাছের পাতা থেকে মালটা বেশি মনে হয়। মালটার ভারে যেন নুয়ে পড়ছে গাছের ডাল। একটু এগুলেই চোখে পড়ে হাসঁ, মুরগি, কবুতর, ছাগলের ঘর। ঘর পেরেুলেই চোখে পড়ে সারি-সারি মালটা গাছ। এ যেন মালটার রাজ্য পর্যটকরা ব্যস্ত মালটার গাছের সাথে নিজেকে এক ফ্রেমে বন্দি করতে। অপরিপক্ক অনেক মালটা ঝরে পড়ে আছে গাছের নিচে।

ফটিকছড়ি ইউনুচ এগ্রোফার্মের মালটা বাগানে লেখক
বাগানের মালিক বন বিভাগ কর্মকর্তা মো. ইউনুছ জানান ২০১৩ সালে ৮ একর জায়গাতে তিনি মালটা চাষ শুরু করেন। প্রথম বছর সাফল্য না পেলেও পরের বছর থেকে গাছে ফলন আসতে শুরু করে এবং বছর-বছর সেটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৫ সালে ২০ লাখ পরের ৩০ লাখ টাকার মালটা বিক্রি করেন। এখানে একটি গাছ থেকে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মালটা পাওয়া যায়। ডিসেম্বর মাসে মালটা গাছে ফুল আসে। ধীরে-ধীরে বিক্রয়োপযোগী হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। প্রায় ৮ মাস একেকটি ফল গাছে থাকে। গত বছর তিনি এ বাগান থেকে মোট ৪৫ লাখ টাকার মালটা এবং একটি গাছ থেকে ২৬ হাজার টাকার মালটা বিক্রি করেন। এ বাগানের মালটা পাইকারি বিক্রি করেন না। ফার্মের সামনে একটি দোকানে খুচরা বিক্রি করেন এখানে গড়ে প্রতিদিন ৬০০ কেজি মালটা বিক্রি হয়।
প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এ বাগান দেখতে আসেন এবং নিজ হাতে গাছ থেকে মালটা ছিঁড়ে ফরমালিন মুক্ত মালটা ক্রয় করেন। ঘুরতে আসা এক পর্যটক জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে মালটার বাগান দেখে আমি অবাক হয়েছি আগে কখনো দেখিনি। আরো বেশি অবাক হয়েছি এর ফলন দেখে । খুব সুন্দর লাগছে বাগানটা এবং কাচাঁ-পাকা ফলে ভরা মালটা গাছগুলো। আমি খেয়ে দেখেছি বিদেশি মালটার চেয়ে এ বাগানের মালটা অনেক বেশি মিস্টি, সুস্বাদু ও ফরমালিনমুক্ত। যা একদম ফ্রেশ।
বর্তমানে এই দৃষ্টিনন্দন মাল্টা বাগানে দুই হাজারেরও বেশী মাল্টা গাছ রয়েছে ফলন দিচ্ছে ৮০০ গাছ। এছাড়াও রয়েছে ৫০০টি আম গাছ, আপেল কুল ৫০টি, পেয়ারা গাছ ৩০০টি, লেবু গাছ ১০০টি, ট্যাক চারা ১০০টি, নাশপাতি, আঙ্গুর, মিষ্টি কামরাঙ্গা, কলা, কাঠাল ও জলপাই গাছ। এখানে বিভিন্ন গাছের চারা উৎপাদন ও বিক্রি করা হয়। মালটা ফল ধরা পর্যন্ত প্রতিটি চারার পিছনে খরচ হয়েছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
এ ব্যাপারে বাগানের মালিক মোহাম্মদ ইউনুছ জানান, সখের বসেই মালটা চাষ করেছেন তিনি। মালটা সারা বছরের এবং সকল শ্রেনী-পেশার মানুষের চাহিদার ফল। প্রতিকেজি মালটা বাজারে বর্তমানে ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানকার জমি মালটা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। যে কেউ ইচ্ছে করলে এর চাষ করতে পারে। সে জন্য কোন উদ্যোগী ব্যক্তি তার সহযোগিতা চাইলে তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে জানান। এ ছাড়া তার বাগান থেকে মালটার কলম চারাও বিক্রি করছেন। এখানে দৈনিক মজুরিভিত্তিক ১৫-২০ শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মজুরি দিতে হয় প্রতি মাসে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইউনুছ বলেন, প্রতিদিন উৎসুক মানুষের ভিড় দেখে তাঁর কাছে আরো বেশী আনন্দ লাগে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লিটন দেবনাথ বলেন, ফরেস্টার মো. ইউনুছ ফটিকছড়ি তথা চট্টগ্রামের গর্ব। তার মালটা চাষে সাফল্য দেখে ইতোমধ্যে উপজেলায় আরো অনেক মালটা বাগান গড়ে উঠছে এবং সাবলম্বী হচ্ছে মানুষ।
সম্পাদনা:আরএইচ/এইচআর







