টু-টাং শব্দে রাতদিন একাকার। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও বসে নেই ষাটোর্ধ দোলন কর্মকার। জীবন-জীবিকার তাগিদে চলছে বিরামহীন কাজ। পূর্ব পুরুষের এই পেশাকে ধরে রেখেছেন তিনি। আবার কেউ কেউ এই পেশা ছেড়ে অন্যত্র কাজ করছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার শুভপুর ইউপির দারোগারহাট বাজারে তার দোকানে কয়লা দিয়ে লোহা পুড়িয়ে টুংটাং শব্দে দাঁ, চুরিসহ সকল সরঞ্জাম নতুনভাবে তৈরি ও পুরাতন গুলোকে শান দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। নতুন ফেনী’র এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে দোলন কর্মকার বলেন, ৩২ বছর ধরে পূর্ব-পুরুষের রেখে যাওয়া এই পেশাকে ধরে রেখেছেন তিনি। আর ক’দিন পরেই কুরবানির ঈদ। তাই পুরাতন গুলোকে শান দিতে অনেক ব্যাস্ত দোলন কর্মকার। দাঁ, চুরি তৈরি করে আগে তিনি প্রতিদিন ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা আয় করতেন। বছরের ১১ মাস ব্যবসা হয় একরকম, কিন্তু এখন সামনে ঈদ তাই প্রতিদিন ২ হাজার ৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হচ্ছে।
তিনি বলেন, লোহার মানভেদে স্প্রিং লোহা ৫শ’ টাকা, নরমাল ৩শ’ টাকা, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১শ’৫০ থেকে ২শ’টাকা, দা ২শ’ ৫০ থেকে ৩শ’ টাকা, বটি সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫শ’ থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হয় বলে তিনি জানান।
দোলন কর্মকার আরো বলেন, গ্রামগঞ্জ থেকে একসময় বিনা পয়সায় কয়লা পাওয়া গেলেও এখন টাকা দিয়েও মিলছেনা এসব কাঠ কয়লা। আবার কিনতে গেলে তাদেরকে দিতে হয় দ্বিগুণ দাম। প্রতি বস্তা কয়লা ২শ’ ৫০ থেকে ৩শ’ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এগুলো তৈরির পর বিক্রি করে সংসার চালান তিনি।
তার বাবা চিতাম কর্মকারও একই পেশায় ছিলেন। দোলন কর্মকার’র দুই ছেলের বড় ছেলেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। আর ছোট ছেলে উপজেলার একটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে।
আব্দুল্লাহ আল নোমান নামের এক ক্রেতা নতুন ফেনী’কে বলেন আধুনিকতার ছোঁয়া ও কালের পরিক্রমায় বর্তমানে বিলুপ্তির পথে কামার শিল্প। এক সময় এই কামারের দোকানে অনেক ভিড় করতো ক্রেতারা। কামারদের কদরও ছিলো অনেক বেশি। তাদের তৈরি করা সরঞ্জাম অনেক বেশি মজবুত ও টেকসই। কিন্তু এখন মেশিনের সাহায্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হওয়ার কারনে আগের মতো ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়না। তাদের তৈরি করা যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষের আকর্ষণ হারিয়ে যাচ্ছে।
সম্পাদনা: আরএইচ/ এমকেএইচ







