স্বকৃত নোমান।
একটি জাতির জীবনচর্চা ও চর্যার বৈচিত্র্যময় সমন্বিত রূপ হচ্ছে সংস্কৃতি। যেমন আমরা বাঙালি। আমাদের জীবনযাপনের ধরণ, ঐতিহ্য, আচার-আচরণ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, নীতি-নৈতিকতা- এগুলো সংস্কৃতির প্রধান উপকরণ। এক জাতির সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য জাতির সংস্কৃতির হুবহু মিল থাকে না। বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে আরবীয় সংস্কৃতির মিল নেই। জার্মান সংস্কৃতির সঙ্গে ল্যাটিন আমেরিকার সংস্কৃতির মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। মঙ্গোলিয়ান সংস্কৃতির সঙ্গে চৈনিক সংস্কৃতির মিল নেই। তার মানে সংস্কৃতিরও অনেক রূপ আছে। একটা স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে বাঙালিরও নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। বাঙালি ভাত-মাছ খায়, লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরে, জারি-সারি-ভাটিয়ালি গায়- এগুলো বাঙালি সংস্কৃতির উপাদান। এরকম হাজার হাজার উপাদান আছে, যেগুলো বাঙালিত্বের পরিচয় বহন করে। স্বকীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সংস্কৃতির কারণেই বাঙালি বিশ্বের বুকে আলাদা অস্তিত্ব নিয়ে টিকে আছে, থাকবে। পৃথিবীর বুকে এমন জাতির সংখ্যা খুবই কম যারা সংস্কৃতির জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছে। বাঙালি দিয়েছে। ভাষা আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। আধিপত্যবাদী সংস্কৃতি আমাদের এই ভাষাগত সাংস্কৃতিক অধিকার হরণ করতে চেয়েছিল। আমরা তা মানিনি। আর মানিনি বলেই রফিক-সালাম-বরকত-জব্বার বিসর্জন দিলেন তাদের জীবন।
বাঙালি রবীন্দ্রসংগীত শোনে, কিন্তু আধিপত্যবাদী সংস্কৃতি রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করল। বাঙালি তা মানতে পারেনি। বিদ্রোহ-বিপ্লবে ফেটে পড়ল। সুতরাং দেখা যাচ্ছে স্বাধীনতা আন্দোলনের নেপথ্যে সংস্কৃতির ভূমিকাও অনেক। কিন্তু সংস্কৃতি কি অপরির্তনীয়? সংস্কৃতি কি যুগ যুগ ধরে একই রকম থাকে? না, পরিবর্তন নিশ্চয়ই আছে। গুণীজনেরা বলেন, সংস্কৃতি নদীর মতো। নদী যেমন গতিপথ বদলায়, সংস্কৃতিও তার গতিপথ বদল করে। আদি ও অকৃত্রিম সংস্কৃতি বলে কিছু নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতিরও পরিবর্তন হয়। পৃথিবীর সব জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিই সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতিও এর বাইরে নয়। শত বছর আগের বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে আজকের বাঙালি সংস্কৃতির বহু অমিল খুঁজে পাওয়া যাবে। বাঙালির প্রাচীন সংস্কৃতি কী ছিল আর বর্তমানে কী আছে, এর মধ্যে কী কী পরিবর্তন ঘটে গেল, সুলুক সন্ধান করা যেতে পারে।