মু. আতাউর রহমান।
আজ থেকে প্রায় দুহাজার বছর আগে রোমের বিকৃত মস্তিস্কের শাসক ‘নিরো ক্লদিয়াস সিজার অগাস্টাস জারমানিকাস’ নামের এই ব্যাক্তিটি প্রায় ১৪বছর সম্রাট ছিলেন৷আমাদের দেশের মানুষ তাকে খুব ভালভাবে না চিনলেও তার ঐতিহাসিক রসিকতামূলক দুস্কর্মটির জন্য তার নাম অনেকেই শুনেছে৷ইতিহাস বলে যখন রোম শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠির ঘরে আগুন লেগেছিল তখন এই নিরো রাজপ্রাসাদে বসে মনের আনন্দে বাঁশি বাজিয়ে ছিল৷তাই আজকের পৃথিবী তার এহেন দূস্ককর্মটি এখনো মনে রেখেছে৷
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে, আজ প্রায় মাসখানেক ধরে এশিয়ার সর্ববৃহত্তম হাওড় অঞ্চল ‘হাকালুকি’ সুনামগন্জ, মৌলভীবাজার জেলা অসময়ের বন্যাকবলিত হওয়ায় হাজার হাজার মেট্টিক টন মাছ, পানিজ সম্পদ, গভাধী পশু, হাঁস মুরগীতো বটেই দরিদ্র কৃষকের সোনা ধানসহ অসংখ্য ফসলি জমি তলিয়ে গেছে, যাতে বিশেষজ্ঞদের দাবি ফসলে পচন হওয়ার কারনে দূর্গন্ধের ফলে পানিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়ায় এই জলজ সম্পদ গুলো আতœহুতি দিয়েছে! কিন্তু সোসাল মিডিয়ায় এর কারন টি উঠে আসছে ভিন্নভাবে,বলা হচ্ছে ভারত থেকে প্রবাহিত এই পানিতে বিষাক্ত ইউরেনিয়াম মিশ্রিত থাকায় জলজ প্রাণী গুলোর এই আত্মহনন৷ বন্যার কারণ হিসেবে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়া,এখন ঐ বাঁধ নির্মানে দূর্নিতির তদন্ত হবে! হতে হতে সুনামগন্জ বাসীর কেল্লা ফতেহ!
সূত্র মতে,প্রায় ৩ লক্ষাদিক পরাবার আজ নিঃস্ব, তারা এখন রাত দিন কাটাচ্ছে অর্ধাহারে-অনাহারে৷ সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে মাসে ৩০কেজি চাল আর নগদ ৫০০টাকা দেওয়ার পতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে৷ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম গতকাল তাঁর এক লেখায় লিখেছেন, এ পরিমান সাহায্য রিতিমত দরিদ্র জনগোষ্ঠির সাথে ছেলে খেলার মত! আসলেই তাই, আবার, অনেকে এই অঞ্চলকে দূর্গত এলাকা ঘোষনার দাবি করলে, ত্রাণ সচিব দূর্যোগ আইনের ২২নং ধারার রেফারেন্স দিচ্ছেন, মনে হচ্ছে নিরোর বাঁশির সুর উঠতে শুরু করেছে, দেশের সর্বোচ্ছ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে মিডিয়ায় যেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বেশী প্রকাশ করা না হয়, বরঞ্চ উন্নয়নের মর্মবানী প্রচার করতে বলা হচ্ছে! হা কি সেলুকাস! এখনো পর্যন্ত দূর্গত এলাকায় চাহিদার আলোকে ত্রান পৌছায় নি,আর এদিকে কর্তাব্যাক্তিরা উন্নয়নের বাঁশি বাজিয়েই যাচ্ছেন৷অনেকটা সম্রাট নিরোর মত! অপরদিকে ওপারের দিদি মমতা কালকে আহবান জানিয়েছেন,আত্রাই নদীর উপর নির্মিত বাঁধ ভেঙ্গে দিতে! সে কি আবদার! ভারতের পাহাড়ী পানি হলেও আজ অব্দি ভারত সরকারের পক্ষ থেকে নূন্যতম দুঃখ প্রকাশ পর্যন্ত করা হয় নি৷ প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর পরই পানি দিয়ে যে উপঢৌকন নামের উপহাস ভারত করল তারও কোন প্রতিউত্তর বাংলাদেশ সরকার করার মত সাহস দেখাতে পারে নি৷
দেশের কতিথ ৩৯টি (সরকারী দল ব্যাতিত) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলেরও কোন ত্রান সহোযগিতা এখনো পর্যন্ত চোখে পড়ে নি৷শুধু মাত্র সরকারের বিরুদ্ধে একটা বিবৃতি দিয়েই উনারা ক্ষ্যান্ত! এবং কি বিরোধী দল দাবি কারী বিএনপি-জামায়াত ও না! বলা হয়ে মানুষের জন্য রাজনীতি,কিন্তু এ দলগুলো কার জন্য রাজনীতি করে এটাও এখন প্রশ্ন সাপেক্ষ৷
পরিশেষে, এটুকু বলবো অতিসত্বর হাওড় অঞ্চল কে দূর্গত এলাকা ঘোষনা করে কবলিত মানুষের পাশে দাড়ানো যেমন দরকার,তেমনি ভারতের সাথে অবিলম্বে সব পানি সমস্যার সমাধান করা দরকার না হয়,বর্ষায় একবার ‘বঙ্গবাহাদুর’ আসবে একবার ‘ইউরেনিয়াম’ আসবে আর গ্রীস্মে মানুষ ক্ষরায় ভুগবে এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। সরকার এবং সব রাজনৈতিক দল মানুষের জন্যই রাজনীতি করবে নিরোর মত বাঁশি বাজানো বন্ধ করবে এই প্রত্যাশায় ইতি টানছি।
লেখক: সংবাদকর্মী।
‘নিরোরা আজও বাঁশি বাজায়’







