লাখো মানুষ অশ্রæসিক্ত নয়নে বিদায় দিয়েছে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আগুনে পুড়ে নিহত আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সোনাগাজী সাবের পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। জানাযায় ইমামতি করেন নুসরাতের পিতা মাওলানা একেএম মূসা।
এর আগে সকাল থেকে আতœীয়-স্বজনসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে নারী-পুরুষ তাদের বাড়িতে ভিড় জমায়। বিকেল ৫টায় সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চর চান্দিয়া গ্রামের বাড়িতে নুসরাতের লাশবাহী ফ্রিজারভ্যান পৌছলে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নুসরাতের পিতা একেএম মুসা, মা শিরিনা আক্তার, বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান, ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বার বার মুর্চা যান। নুসরাতের মরদেহ একনজর দেখতে সকাল থেকে অপেক্ষা করা মানুষের চোখে-মুখে ছিলো কান্নার চাপ।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নুসরাতের মরদেহ বাড়িতে পৌছলে মানুষের উপছে পড়া ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। পরে সেখানে উপস্থিত আতœীয়-স্বজনসহ আগতদেও মরদেহ না দেখিয়ে সোনাগাজী ছাবের পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয়। সেখানে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে জানাযা পূর্ব কার্যক্রম শুরু করেন সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র এড. রফিকুল ইসলাম খোকন। এসময় বক্তব্য রাখেন ফেনী ইউনিভার্সিটি ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান, পুলিশ সুপার এস.এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিকেএম এনামুল করিম, জেলা আ.লীগ সভাপতি আবদুর রহমান বিকম, সোনাগাজী উপজেলার চেয়ারম্যান জেড. এম কামরুল আনাম, নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিফটন, সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল পারভেজ, নিহত নুসরাতের পিতা একেএম মুসা ও বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
দেশবাসী প্রতিবাদ করেছে :
নুুসরাতের উপর নৃশংস এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করার কথা সেখানে গোটা দেশবাসী প্রতিবাদ করেছে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রশাসন, চিকিৎসক ও গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করেন।
বোনের জন্য ক্ষমা চাইলেন নোমান :
সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আগুনে পুড়ে নিহত আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির জানাযায় বোনের জন্য ক্ষমা চাইলেন বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। জানাযা পূর্ব বক্তব্যে কান্না জড়িত কন্ঠে দেশবাসীর কাছে দোয়া ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন বিগত ৫দিন ধরে সমগ্র দেশের মানুষ আমার বোনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা বোনের সুস্থ্যতার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তারাসহ দেশবাসীর প্রতি নোমানও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বক্তব্যে বোনের হত্যাকারীদের বিচারের দাবী করেন।
এর আগে বুধবার রাত সাড়ে নয়টায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নুসরাত জাহান রাফি। পরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে এগারোটায় ময়না তদন্ত শেষে ডাক্তারা স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেন। ১২ টায় লাশ নিয়ে রওয়ানা হয়ে বিকেল ৫টায় তার বাড়িতে পৌছে লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যান।
এদিকে নুসরাতের জানাযা শেষে সোনাগাজী জিরো পয়েন্টে দোষীদেও শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করেছে সমৃদ্ধ সোনাগাজী উন্নয়ন ফোরাম। মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি ইব্রাহিম মাহমুদ শাকিল, মুতিগঞ্জ ইউপি সদস্য মো. খোকনসহ সংগঠনের অনেকে। মানববন্ধনে এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ৬ এপ্রিল শনিবার সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যায় নুসরাত জাহান রাফি। মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবি নিশাতকে ছাদের উপর কেই মারধর করেছে এমন সংবাদ দিলে সে ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যায়। সেখানে মুখোশপরা ৪/৫জন ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। সে অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় সোমবার বিকালে বোরকা পরা ৪জন সহ অজ্ঞাতদের নামে মামলা দায়েরের পর ্ওইরাতে এজহার পরিবর্তন করে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ ৮ জনের মান উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামালা দায়ের করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
এর আগে ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
সম্পাদনাঃ আরএইচ/ এনকেটি