ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুক্রবার সকাল ১১টায় পিবিআইর পরিদর্শক আবুল কাসেম ভূঞা ও রতেফ চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল নুসরাতের কবরে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। তাদের ফুলেল শ্রদ্ধায় লেখা ছিল `নুসরাতের জন্য ভালোবাসা’ পিবিআই। এসময় কবর জিয়ারতে অংশ নেন পিবিআই সদস্যরা।
মোনাজাত পরিচালনা করেন নুসরাতের বাবা একেএম মুসা মানিক। প্রিয় কন্যার অতীত স্মৃতির কথা মনে এনে জান্নাতুল ফেরদাউস কামনা করে মোনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে অঝর ধারায় কাঁদলেন তিনি।
এসময় তিনি করোনা ভাইরাসের মহামারি থেকেও বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণ কামনা করে রোগ মুক্তি চান। মোনাজাতে অংশ নিয়ে পিতার সাথে পিবিআইয়ের সদস্যরাও কাঁদলেন নুসরাতের জন্য।
কবর জিয়ারত শেষে পিবিআই’র সদস্যরা নুসরাতের বাবা ও ভাইকে শান্তনা দিয়ে বলেন গভীর রাতেও পিবিআই’র সদস্যরা আপনাদের পাশে থাকবে। যে কোন আপদে-বিপদে পিবিআইকে আপনাদের পাশে পাবেন।
এসময় সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মঈন উদ্দিন আহমেদ ও ওসি (তদন্ত) আবদুর রহিম সরকার উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সকালে নুসরাতের বাড়িতে পরিবারের আয়োজনে কোরআন খতম, মিলাদ ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। এসময় মোনাজাত পরিচালনা করেন সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ হোসাইন। এসময় ওই মাদরাসার আরবী প্রভাষক মাওলানা আবুল কাসেম, স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার সকালে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মঈন উদ্দিন আহমেদ নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদেরকে শান্তনা ও সাহস দেন। যে কোন পরিস্থিতিতে সোনাগাজী মডেল থানার পুলিশ নুসরাতের পরিবারের পাশে আছেন এবং থাকবেন বলে আশ্বাস দেন।
নুসরাতের বড় ভাই মামলার বাদি মাহমুদুল হাসান নোমান, তার প্রতিক্রায় জানান, আমরা মহান আল্লাহর দরবারে আমার বোনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। আমরা শুনেছি আসামিরা উচ্চ আদালতে আপীল করেছেন। শীঘ্রই উচ্চ আদালতে আপীলের শুনানী শুরু হবে। উচ্চ আদালতের কাছেও আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশী। আদালত যে রায় দেন আমরা সে রায় মেনে নেবো।
নুসরাতের পিতা একেএম মুসা মানিক বলেন, বিশ্বাসীর কাছে আমার মেয়ের জন্য দোয়া চাই। আমাদের দৃষ্টি এখন উচ্চ আদালতের দিকে। আদালতের রায়ের প্রতি আমরা সবসময় শ্রদ্ধাশীল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতীতে যেমনি আমাদের পাশে ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত; ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষার আরবী প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গেলে হল থেকে ডেকে পাশের ভবনের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় তাকে তার সহপাঠিরা গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে হত্যার চেষ্টা চালায়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউ নিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে নুসরাত জাহান রাফি।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি