ডা. ছরওয়ার আলম।
এক বছর পূর্বে ১মার্চ ২০১৬ খ্রি. তারিখে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দুরারোগ্য এবং জটিল পেটের অসুখ আইবিএস রোগে ভুগে “২০ বছরে এমন প্রশান্তি পাইনি!” শীর্ষক একটি লিখা ফেনীর জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল নতুন ফেনীতে প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনটি কোন না কোনভাবে নজরে পড়ে কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১৫ বছরের কিশোর আবদুল মান্নানের। লিখাটি পড়ে দীর্ঘ দিন ‘আই বি এস’ (ইরেটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম) এ ভুগে অনেক চিকিৎসার পরও আরোগ্য না হওয়া আবদুল মান্নান আরোগ্যের আশায় প্রায় ২০০ মাইল পাড়ি দিয়ে আমাদের নিকট আসে।
কিশোরগঞ্জের কিশোর মান্নান একাকী চিকিৎসা নিতে আসা আমাদেরকে স্তম্ভিত করেছে। জিজ্ঞেস করলাম তুমি স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা না করে এখানে এসেছ কেন? মান্নান জানায় আমার এই সমস্যার জন্য অনেক চিকিৎসক দেখিয়েছি। সবাই বলে এ রোগ আরোগ্য হবার নয়। কিন্তু আমার কষ্টের শেষ নাই। তাই অনেকটা বেরোখা হয়ে আমি সাহস করে এখানে চলে এসেছি। এ রোগ নিয়ে আমি বাঁচবো কিভাবে সেই চিন্তায়। যাক তাকে শান্তনা দিয়ে বললাম তোমার ‘আইবিএস’ এর কারণে কি কি কষ্ট হয় বিস্তারিত বল। সে জানায়, ছোট থেকে আমার হজম শক্তি দুর্বল। বর্তমানে কয়েক বছর ধরে দুধ ও দুধ জাতিয় খাবার মোটেই খেতে পারিনা। শাকসবজি ফলমূল বিশেষ করে পানি জাতিয় ফল হজম হয়না, যেভাবে খাই পায়খানার সাথে সেভাবে বের হয়ে যায়। এছাড়া মাংস, রুটি, ও তৈল চর্বি জাতিয় খাবার অসহ্য। কোন মাছ খেতে পারিনা। ঝাল সহ্য হয়না। মিষ্টি অসহ্য। ডিম অসহ্য। ক্ষুধা কম। পেটে গ্যাস হয়। সারাক্ষণ পেটে বুটবাট করে। সারা বছর আমাশয় আছে, মাঝে মাঝে পায়খানার সাথে রক্ত যায়। পায়খানা সবসময় নরম। প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে পায়খানা বেশি হয়। খাবারের পর পায়খানায় যেতে হয়। পায়খানায় গিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকি। সবচেয়ে বড় অসুবিধা হয় পায়খানার ভয়ে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারিনা, পড়া মনে থাকেনা, পড়তে মনে চায়না, দুরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারিনা, ভাল কোন খাবার খেতে পারিনা। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছি। কোন কিছু ভাল লাগেনা। সারাক্ষণ রোগ নিয়ে চিন্তা করি।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগ ধরে চিকিৎসা হয়না। রোগীর সকল লক্ষন সংগ্রহ করে সেখান থেকে মানসিক, সার্বদৈহিক, হ্রাস-বৃদ্ধি, কাতরতা, ইচ্ছাঅনিচ্ছা, একক, বিরল প্রকৃতির প্রভৃতি লক্ষনের গুরুত্ব বেশি দিতে হয়। উক্ত নিয়মে মান্নানের রোগীলিপি মূল্যায়ণ করে ঔষধ নির্বাচন করলাম “নেট্রাম সালফ”। ৩ মাসের ঔষধ দিয়ে মান্নানকে বিদায় দিলাম। ১ মাস পর মান্নান ফোন করে জানান আল্লাহর রহমতে সে এখন ভাল আছে। আইবিএস রোগে ভুগে হতাশাগ্রস্থ কিশোরের মুখে এখন প্রশান্তির হাসি।
লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।