আবু লাইছ মোহাম্মদ ত্বোহা >>
দ্বীনি শিক্ষার আস্থা ও বিশ্বাসের নাম আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দ্বিনী শিক্ষার মশাল জালিয়ে রেখেছে। দেশ সেরা অসংখ্য গুণি ও কৃর্তিমান স্ব-আসনে অধিষ্ঠিত তাদের অনেকরই হাতেখড়ি এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। শুধুমাত্র ফেনী নয় দেশ ব্যাপী শিক্ষার আলো ছড়িয়ে ফেনীর মুখ উজ্জল করছে এ প্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, ১৯৭৮ সালে ফেনী শহরের প্রাণ কেন্দ্রে মনোরম পরিবেশে একশতাংশ জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা। আঞ্জুমানে ফালাহিল মুসলিমীন নামক ট্রাস্ট কতৃক পরিচালিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৯৮৫ সালে সরকারী স্বীকৃতি লাভ করে। অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ফেনীর সীমানা ছাড়িয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় দাখিল ও আলিমে একাধিকবার দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়।
১ম শ্রেণী থেকে কামিল পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানে। একটি ৬’তলা বিশিষ্ট ভবন, তিনটি ৩ তলা বিশিষ্ট ভবন ও একটি দোতলা ভবনের শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মহিলাদের জন্য রয়েছে স্বতন্ত্র ক্যম্পাস। দারুল আইতাম, হেফজখানার সমন¦য়ে জেলার দ্বীনি মহীরুপে পরিণত হয়েছে অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে আবাসিকে থাকার সু-ব্যবস্থা রয়েছে, ব্যবস্থা রয়েছে পরিচ্ছন্ন ডাইনিংয়ের। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শ্রেণী কার্যক্রম শুরু হয়ে দুপুর দেড়টার দিকে শ্রেণী কার্যক্রমের সমাপ্তি হয়। মাদ্রসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য নামাজ এবং অন্যান্য ইবাদত-বন্দিগির জন্য রয়েছে নিজস্ব মসজিদ, ব্যবস্থা রয়েছে মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজ পড়ার সু-ব্যবস্থা।
জানা যায়, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে ৯ বছর দাখিল কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় ফলাফলের দিক থেকে জাতীয় পর্যায়ে টপ টেন/টপ টুয়েন্টি প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার গৌরব অর্জন করে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২৯ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও ৩০ জন ননএমপিও শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে পরিচালিত হচ্ছে। আর এই পরিশ্রমের ধারাবাহিকতায় সাফল্যের অববাহিকায় প্রতিষ্ঠানটি উন্মোচিত হয় বারবার। বিগত কয়েক বছরের ফলাফলে দিকে নজর দিলে এ প্রতিষ্ঠানের অবস্থান সহজেই নির্ণয় করা যায়। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠান থেকে আলিম পরিক্ষায় ২শ’ ৬০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৫৩ জন জিপিএ-৫ লাভ করে, ২০১৪ সালের পরিক্ষায় ৩শ’ ১৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৫৯ জন জিপিএ-৫ লাভ করে, ২০১৫ সালে ২শ’ ৭৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ১৯ জন জিপিএ-৫ লাভ করে। ২০১৪ সালে দাখিল পরীক্ষায় ২শ’ ২১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ১শ’৪ জন জিপিএ-৫ লাভ করে, ২০১৫ সালের পরিক্ষায় ২শ’ ৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৭০ জন জিপিএ-৫ লাভ করে ও ২০১৬ সালে ১শ’ ৮৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৬০ জন জিপিএ-৫ লাভ করে। জেডিসি পরীক্ষা ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠান থেকে ১শ’ ৪০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৫২ জন জিপিএ-৫ লাভ করে, ২০১৪ সালে ১শ’ ৮৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৮২ জন জিপিএ-৫ লাভ করে, ২০১৫ সালে ১শ’ ৭৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৩৫ জন জিপিএ-৫ লাভ করে। ইবতেদায়ী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ২০১৫ সালে ১শ’ ১৮ জন শিক্ষার্থী পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ১৫ জন জিপিএ-৫ লাভ করে এবং ২০১৪ সালে ১শ’ ২৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ০৯ জন জিপিএ-৫ লাভ করে থাকে।
শিক্ষার্থীদের তথ্য-প্রযুক্তিতে অগ্রসর করে গড়ে তুলতে রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব। দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করার জন্য চালু রয়েছে কাব স্কাউট, বয় স্কাউট, ও রোভার স্কাউটের কার্যক্রম। বর্তমানে ৫টি দল উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে পুরস্কৃত হয়েছে। জেলা ও বিভাগীয় বিভিন্ন বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কৃত ও ফেনীর সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে সুসজ্জিত পাঠাগার, বক্তৃতা অনুশীলনের জন্য সাপ্তাহিক জলসা, সাধারণ জ্ঞান, বিতর্ক, প্রশিক্ষিত ক্রীড়া বিষয়ক শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে সাপ্তাহ ব্যাপী বার্ষিক ক্রিড়া ও সংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। শিক্ষার্থীদের আনন্দদানে বিভিন্ন বিভাগে বার্ষিক শিক্ষা সফর ও বনভোজনের আয়োজন করা হয়।
এ বিষয়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি ফারুক আহমাদ প্রতিষ্ঠানের এমন ফলাফলে সন্তুষ্টি জানিয়ে বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সুনামের অধিকারী হয়েছে। তিনি আরো জানান, শিক্ষকরা সাময়িক পরীক্ষাগুলো ছাড়াও ক্লাস টেস্ট, মডেল টেস্ট ও টিউটোরিয়াল পরিক্ষার ব্যবস্থা রেখেছেন যা শিক্ষার্থীদের ভাল ফলাফল অর্জনে ভূমিকা রাখে। প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও ধারবাহিক সফলতা ধরে রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সম্পাদনা: আরএইচ/এএলএমটি