কোভিড-১৯ এর সময়েও ফেনীর কাজীরবাগ ইকোপার্কের কাছ থেকে পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার ১৩০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ না থাকলে আয়ের অঙ্কটি ১৬-২০ লাখ টাকায় দাঁড়াতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এখন স্বল্প পরিসরে পার্কটি চালু হওয়ায় প্রতিদিন ৫-৬ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। তবে স্বাভাবিক সময়ে মানসিক প্রশান্তির জন্য পার্কটিতে দৈনিক ১০-১২ হাজারের অধিক মানুষ ঘুরতে আসতেন। ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়নের ফেনী-পরশুরাম সড়ক সংলগ্ন স্থানে সামাজিক বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে চলছে ইকোপার্কটি।
সামাজিক বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফেনীতে ১৬ লাখ মানুষের বিনোদনের তেমন কোনো স্থান না থাকায় কাজীরবাগ ইকোপার্কটি স্থাপনের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। ফেনী-পরশুরাম সড়কের পাশে কাজীরবাগ এলাকার চার দশমিক ৭৫ একর ভূমির ওপর পার্কটি স্থাপন করে সামাজিক বন বিভাগ।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দুই কোটি টাকা অর্থায়নে এ পার্কটির নির্মাণকাজ ২০১৫ সালে শুরু হয়ে ২০১৮ এ শেষ হয়। এছাড়াও অন্য একটি প্রকল্পে ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ইকো পার্কের অভ্যন্তরে একটি দ্বিতল বিশ্রামাগার (রেস্ট হাউজ) স্থাপন করা হয়েছে।
সরেজমিনে ইকোপার্ক ঘুরে দেখা যায়, পার্কটিতে প্রবেশের পরই নজর কাটে ফুল বাগানের মনোরম দৃশ্য। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ পাকা সড়ক, পথের পাশে ও বাগানের আশে পাশে বসে গল্প করার জন্য ২০টি বেঞ্চ, পার্কের ভেতরে দর্শনার্থী শিশুদের জন্য শিশু কর্ণার করা হয়েছে। সেখানে শিশুদের মেরী গো রাউন্ড (ঘুর্ণয়মান), স্লিপার, ঢেঁকি, দোলনা, ব্যাঙের ছাতাসহ আনন্দ উপভোগের নানা সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া পার্কের ভেতরেই দর্শনার্থীদের খাওয়ার জন্য রয়েছে একটি রেস্তোরা। পার্কের শেষপ্রান্তে চিড়িয়াখানার আদলে একটি কর্ণার করা হয়েছে। সেগুলোতে রয়েছে হরিণ, বানর, ময়ূর, খরগোশ, তিথির, টিয়া, কাকাতুয়া, টার্কি ও বনমোরগ।
পার্কের মাঝখানে রয়েছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির আদর্শ বাগান, নার্সারি সেন্টার, বিভিন্ন বনজ, ফলজ, ওষুধী, বিরল ও বিলপ্ত প্রজাতির সমন্বয়ে একটি মিনি বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং ফুলের বাগান।
বিশ্রামাগারের সামনেই একটি সুদৃশ্য ফোয়ারা, পাশেই একটি পুকুর, পুকুরের চারপাশে চারটি পাকাঘাট, মাঝখানে একটি সুন্দর ফোয়ারা রয়েছে। পুকুরে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য রয়েছে একটি সুন্দর নৌকা। এছাড়া রয়েছে প্রায় ৫০ ফুট উচু একটি পর্যবেক্ষন টাওয়ার।
তানিয়া সুলতানা নামের দর্শনার্থী এক স্কুল শিক্ষক জানান, সব ধরনের বয়সের মানুষের জন্য পার্কটিতে দেখার নানা বিষয় রয়েছে। কিন্তু শিশুদের জন্য এখানে রাইড স্বল্পতা রয়েছে। আরো কয়েকটি রাইড যোগ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
বন বিভাগের ফেনী সদর উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা তপন কুমার দেবনাথ জানান, কাজীরবাগ ইকোপার্কটি ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে দর্শনার্থীদের জন্য উম্মুক্ত করা হয়। পার্কের উদ্বোধনী মাসে দর্শনার্থী থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। ফেনী শহর থেকে যাতায়াত সহজ হওয়ায় দিন দিন পার্কে দর্শনার্থী বাড়তে থাকে।
তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বর মাসে পার্কটির রাজস্ব আয় দুই লাখে এসে দাঁড়ায়। ওই বছরের পাঁচ মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়। বিগত বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দর্শনার্থী ফি আদায় হয় তিন লাখের বেশি।
তিনি বলেন, করোনাকালে নভেম্বর থেকে স্বল্প পরিসরে পার্কটি চালু করা হলেও দর্শনার্থী প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারপর বছরজুড়ে সাত মাস বন্ধ থাকার পরও প্রায় ছয় লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
ফেনীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাকসুদ আলম জানান, ফেনীর মানুষ বিনোদন প্রিয়। তারা পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে ঘুরতে পছন্দ করে।
মহামারি কেটে গেলে পার্কটি একদিকে ফেনী ও আশপাশের মানুষের বিনোদনের অন্যতম স্থানে পরিণত হবে। অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে বলে মনে করেন বন বিভাগের এ কর্মকর্তা।