এ সেই গোলাম আযম • নতুন ফেনীনতুন ফেনী এ সেই গোলাম আযম • নতুন ফেনী
 ফেনী |
১২ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এ সেই গোলাম আযম

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১১:১৪ অপরাহ্ণ, ২৩ অক্টোবর ২০১৪

নতুন ফেনী ডেস্ক >>

গোলাম আযমের জন্ম ১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় নানার বাড়িতে। তার দাদার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও গ্রামে। গোলাম আজমের ছেলে আব্দুল্লাহ-হিল আমান আজমী জানান, তার বাবার শিক্ষাজীবনের বড় অংশ কেটেছে ঢাকায়। তবে গোলাম আযম অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত গ্রামের স্কুলে পড়ার পর ঢাকায় এসে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অনার্সে ভর্তি হলেও তা শেষ করতে পারেননি। আমান আজমী বলেন, “গোলাম আযম তখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং ডাকসুর জিএস থাকার কারণে অনার্স শেষ করতে না পেরে ডিগ্রি পাস করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন।” গোলাম আযম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসুর জিএস ছিলেন ১৯৪৯ সালে। তখন ডাকসুর ভিপি ছিলেন অরবিন্দ বোস। সে সময় ছাত্রদের পক্ষ থেকে ঢাকা সফররত পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে বাংলা ভাষার দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন গোলাম আযম। তার এই ভূমিকাকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয় জামায়াতের পক্ষ থেকে। সে সেময় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় বামপন্থী রাজনীতিক বদরউদ্দিন উমর পরে এ নিয়ে গবেষণাও করেন। তিনি বলেছেন, “হিন্দু কোনো ছাত্রকে দিয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছের স্মারকলিপি পেশ করা হলে তার ভিন্ন ব্যাখ্যা হতে পারে। সে কারণে তখন ডাকসুর ভিপি অরবিন্দ বোসকে বাদ দিয়ে জিএস গোলাম আযমকে দিয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছিল।” বদরউদ্দিন উমরের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলা ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার বিষয়টি ভুল ছিল বলেও গোলাম আযম পরে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু জামায়াতের দাবি, এটি অপপ্রচার। কর্মজীবন: গোলাম আযম কর্মজীবনের শুরু ১৯৫১ সালে, রংপুরের কারমাইকেল কলেজে শিক্ষক হিসেবে। জানা যায়, শিক্ষক থাকার সময় গোলাম আযম ক্লাসের বাইরে ছাত্রদের সঙ্গে তেমন সম্পর্ক রাখতেন না। তখন রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন না তিনি। কিন্তু তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে বক্তব্য তুলে ধরতেন। তাবলিগ থেকে রাজনীতিতে এ নেতার পদার্পন তবে শিক্ষকতা করার সময়ই একপর্যায়ে গোলাম আযম ১৯৫৪ সালে সৈয়দ আবুল আলা মওদুদির জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন। আর ১৯৫৬ সালে চাকরি ছেড়ে সরাসরি জামায়াতের রাজনীতিতে নেমে পড়েন। দলটির সমমনা একজন ইসলামী চিন্তাবিদ শাহ আব্দুল হান্নান বলেন, গোলাম আযম প্রথমে তমুদ্দন মজলিশের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং পরে তাবলিগ জামাতে সক্রিয় হয়েছিলেন। অবশ্য জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ সম্পাদক হয়ে মূল নেতৃত্বে এসেছিলেন। গোলাম আযম প্রথম জামায়াতের আমির হয়েছিলেন ১৯৬৯ সালে। পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির গোলাম আযম একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের শেষ দিকে ২২ নভেম্বর ঢাকা ছেড়ে পাকিস্তান যান। ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে ঢাকায় আসেন অসুস্থ মাকে দেখার কথা বলে। তবে তিনি আর ফিরে যাননি। স্বাধীন বাংলাদেশে গোলাম আযম ১৯৮১ সালে প্রথম জনসমক্ষে আসেন। ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে নিহত ফিলিস্তিনিদের জন্য আয়োজিত গায়েবানা জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে সেখানেই প্রতিবাদের মুখে পড়েছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানিয়েছেন। প্রায় এক দশক পর ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর যখন গোলাম আযমকে জামায়াতের প্রকাশ্য আমির ঘোষণা করা হয়, তখন জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। সেই আন্দোলনের অন্যতম একজন নেতা শাহরিয়ার কবির বলেন, ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ গণ-আদালত করে গোলাম আযমসহ কয়েকজনের প্রতীকী বিচারও করা হয়েছিল। শাহরিয়ার কবির বলেন, ’৭১ সালে গণহত্যা শুরুর পরপর গোলাম আযম পাকিস্তানের সামরিক জান্তার সঙ্গে দেখা করে সেই গণহত্যার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তাদের সহযোগিতা করার জন্য মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী পার্টির সঙ্গে মিলে গোলাম আযম প্রথমে শান্তি কমিটি গঠন করে মিছিল-সমাবেশ করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামী সরাসরি আলবদর ও রাজাকার নামে দুটি বাহিনী গঠন করেছিল। আন্দোলনের মুখে নাগরিকত্বের প্রশ্নে গোলাম আযমকে জেলে যেতে হয়েছিল। জেনারেল এরশাদের পতনের পর ৯১-এর নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য অন্য দলের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। আর সমর্থনের বিনিময়ে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব দেয়ার ব্যাপারে এক অনানুষ্ঠানিক সমঝোতা হয়। আব্দুল্লাহ-হিল আমান আজমী বলেন, “এই সমঝোতা বা অনুকূল পরিবেশের সুযোগ নিয়েই জামায়াত গোলাম আযমকে প্রকাশ্যে আমির ঘোষণা করে। কিন্তু একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের মুখে সরকার বাধ্য হয়ে ’৯২ সালের মার্চ মাসে গোলাম আযমকে গ্রেফতার করেছিল। সেই গ্রেফতারের ক্ষেত্রে বিদেশী নাগরিক হয়ে দেশের একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।”আজমী আরো জানান, নাগরিকত্বের প্রশ্নে হাইকোর্টে জামায়াত রিট মামলা করে এর পক্ষে রায় পেয়েছিল। কিন্তু তখন সরকার হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে নাগরিকত্ব ফিরে পেয়ে ১৬ মাস জেল খাটার পর গোলাম আযম বেরিয়ে এসেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে গোপনে ও প্রকাশ্যে জামায়াতের আমিরের দায়িত্ব পালন করে গোলাম আযম অবসর যান ২০০০ সালে। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের রায়ে ৯০ বছরের কারাদণ্ড হয় গোলাম আযমের। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন তিনি। সূত্র: বিবিসি। সম্পাদনা: এনকে

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.