ফুটবল ইতিহাসে 'মারাকানাজ্জো' হিসেবে পরিচিত পঞ্চাশের বিশ্বকাপ • নতুন ফেনীনতুন ফেনী ফুটবল ইতিহাসে 'মারাকানাজ্জো' হিসেবে পরিচিত পঞ্চাশের বিশ্বকাপ • নতুন ফেনী
 ফেনী |
১৬ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফুটবল ইতিহাসে ‘মারাকানাজ্জো’ হিসেবে পরিচিত পঞ্চাশের বিশ্বকাপ

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, ১০ জুন ২০১৮

নিজস্ব প্রতিনিধি>>
যুদ্ধের ভয়াবহতা মাত্রই শেষ হলো। পৃথিবী যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। চারদিকে পুনর্গঠনের তোড়জোড়। ইতালি আর জার্মানির একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে পৃথিবী হাঁটা শুরু করেছে নতুন পথে। ইউরোপিয়ানদের উপনিবেশ ভেঙে স্বাধীন হতে শুরু করেছে বিশ্বের নানা প্রান্তে অসংখ্য দেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে ১৯৪২ এবং ১৯৪৬ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এ কারণে ফিফাও যত দ্রুত সম্ভব ফুটবল বিশ্বকাপটা মাঠে নিয়ে আসতে প্রস্তুত। এ জন্য নব উদ্যমে পরিকল্পনাও শুরু করে দিয়েছে তারা।

কিন্তু সমস্যা হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত তখনও পুরো ইউরোপের বুকজুড়ে। ধ্বংসস্তূপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোটাই এখন তাদের প্রতিদিনকার চ্যালেঞ্জ। সেখানে বিশ্বকাপের আয়োজক খুঁজে বের করাই ফিফার জন্য একটা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ তো ফিফাকে জানিয়েই দিয়েছে- তাদের যে সম্পদ আছে, তা দেশ পুনর্গঠনেই যথেষ্ট নয়, বিশ্বকাপ আয়োজন করবে কী!

পুনরায় বিশ্বকাপ আয়োজন করা তো পুরোপুরি শঙ্কার মধ্যেই পড়ে গিয়েছিল। ১৯৪৬ সালে ব্রাজিল আগ্রহ না দেখানো পর্যন্ত একটা অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে বন্দী ছিল ফুটবল বিশ্বকাপ। তবে তারা আয়োজক হওয়ার প্রস্তাব দিতে গিয়ে একটা শর্তও জুড়ে দিয়েছিল। সেটা হচ্ছে, ১৯৫০ সালে হলে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারবে ব্রাজিল। ফিফার পরিকল্পনা ছিল, ১৯৪৯ সালে চতুর্থ বিশ্বকাপ আয়োজনের।

১৯৪২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন করার জন্য ব্রাজিল এবং জার্মানিই আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠার কারণে ফিফা আয়োজক দেশ নির্ধারণ করতে পারেনি। যদিও ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৪২ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন হলে স্বাগতিক হিসেবে ব্রাজিলকেই বেছে নেয়া হতো। কারণ, আগের দুটি বিশ্বকাপ টানা ইউরোপে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরেরটি এমনিতেই অনুষ্ঠিত হতো লাতিন আমেরিকায়। ১৯৪৬ সালে ব্রাজিল শর্ত দিয়ে আয়োজক হওয়ার প্রস্তাব দিলেও সেটা লুফে নেয় ফিফা। বিশ্বকাপের স্বপ্নদ্রষ্টা জুলে রিমের ফিফার সভাপতি হিসেবে ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে চতুর্থ বিশ্বকাপ থেকে ট্রফির নাম রাখা হয় জুলে রিমে ট্রফি।

আয়োজক তো নির্ধারণ হলো। কিন্তু বিশ্বকাপে লড়াই করবে কারা? বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশ নিয়েই বেশি বিপাকে পড়ে ফিফা। বিশ্বযুদ্ধের পর যখন পৃথিবীজুড়ে চলছে পুনর্গঠনের কাজ, তখন বিশ্বকাপের আয়োজন নিয়ে বিশ্বব্যাপী দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার। ১৯৩৪ আর ১৯৩৮- টানা দুটি বিশ্বকাপ জয়ের কারণে ইতালি এমনিতেই আগ্রহী বিশ্বকাপে খেলার। শুধু তাই নয়, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তারা এমনিতেই খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছে।

কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী ইতালি সরকার ইচ্ছুক ছিল না তারা বিশ্বকাপে অংশ নিক। তারওপর ১৯৪৯ সালে সুপারগা বিমান বিধ্বংসের ঘটনায় পুরো তোরিনো ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা নিহত হয়েছিল। যে কারণে, ইতালি সেরা একাদশ কীভাবে গঠন করবে, সেটা নিয়েই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ইতালি রাজি হলো অংশ নেয়ার জন্য। তবে শর্ত হলো, তারা ব্রাজিলে বিমানে করে যাবে না। যাবে জাহাজে করে। স্বাগতিক আর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়ার পর বাকি ১৪ জায়গার জন্য ৭টি ইউরোপ, ৬টি আমেরিকা এবং একটি নির্ধারণ করা হয় এশিয়া থেকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরাজিত দেশ জার্মানি, জাপান, অস্ট্রিয়াকে নিষিদ্ধই করা হলো বিশ্বকাপে অংশ নেয়া থেকে। মূলতঃ ১৯৫০ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত তাদের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনই গড়ে ওঠেনি। পূর্ব জার্মানি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে। এ কারণে, তাদের কোনো ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনই ছিল না। বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির মিত্র যারা ছিল তারা অঘোষিতভাবে বিশ্বকাপে নিষিদ্ধই ছিল। শুধু ইতালি ছাড়া। তারা তো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। ফিনল্যান্ড জার্মানির সমর্থক থাকলেও ফিফা তাদেরকে অনুমতি দিয়েছিল বাছাই পর্ব খেলার। তবে তারা শেষ পর্যন্ত নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে। যে কারণে, ফিফা ফিনল্যান্ডের বাছাইপর্বের ম্যাচগুলোতে ‘প্রীতি ম্যাচ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব শুরুর আগেই ইউরোপের অনেকগুলো দেশ অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয়। বিশেষ করে ‘আয়রণ কার্টেইনে’ (ইউরোপের যে সব দেশ দেয়াল দিয়ে বিভক্ত ছিল) আবদ্ধ দেশগুলো। যেমন সোভিয়েত ইউনিয়ন, ১৯৩৪ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট চেকোস্লোভাকিয়া এবং ১৯৩৮ সালের ফাইনালিস্ট হাঙ্গেরি।

বাছাইপর্ব চলাকালীনই আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর, পেরু নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। আর্জেন্টিনার সমস্যা ছিল, বিশ্বকাপটা অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ব্রাজিলে। এ কারণে তারা অংশ নেবে না। এ কারণে চিলি, ভলিবিয়া, প্যারাগুয়ে এবং উরুগুয়ে সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়ে যায়। এশিয়ান অঞ্চল থেকে বাছাই পর্ব চলাকালীনই নাম প্রত্যাহার করে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার)। যে কারণে ভারত সরাসরি খেলার সুযোগ পায় বিশ্বকাপে। ইউরোপে বেলজিয়াম নিজেদের নাম প্রত্যাহার করায় সুইজারল্যান্ড এবং তুরস্ক সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়ে যায়।

ফিফার সঙ্গে শুরু থেকেই একটা দ্বন্দ্ব ছিল ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ)। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে বিশ্বকাপের শুরু থেকে ইংল্যান্ড এবং বাকি ব্রিটিশ দেশগুলো অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে। ১৭ বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার পর ১৯৫০ বিশ্বকাপে ফিরে আসে ইংল্যান্ড এবং প্রথম অংশ নেয় তারা। বাছাই পর্বে ইংল্যান্ডের সামনে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ছিল স্কটল্যান্ড; কিন্তু ইংল্যান্ডের সঙ্গে ঝগড়া করে বাছাই পর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও অংশ নেয়নি স্কটিশরা।

একের পর এক অংশ না নেয়ার হিড়িকের পরও ফিফা ১৬টি দেশ নির্ধারণ করে নিয়েছিল, যারা বিশ্বকাপের জন্য লড়াই করবে এবং তাদেরকে চারটি গ্রুপে ভাগও করে নিয়েছিল। স্কটল্যান্ড ছিল তাদের মধ্যে একটি দল। গ্রুপিং হওয়ার পরই তারা নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর নাম প্রত্যাহার করে তুরস্ক। তাদের বক্তব্য, ব্রাজিল যাওয়ার ব্যয় বহন করতে পারবে না তারা। পরিবর্তে বাছাই পর্ব থেকে বাদ পড়া পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড এবং ফ্রান্সকে আমন্ত্রণ জানায় ফিফা। পর্তুগাল এবং আয়ারল্যান্ড সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেনি। ফ্রান্স গ্রহণ করে নিয়েছিল এবং বিশ্বকাপের ড্রতেও যোগ দেয়।

নাম বাদ দেয়ার হিড়িকের মধ্যে শেষ পর্যন্ত ১৫ দল পেয়েছিল ফিফা। চার গ্রুপে ভাগ করা হলেও চার নম্বর গ্রুপে দেয়া হয় তিন দল। কিন্তু বিশ্বকাপের ড্র হওয়ার পর ‘ব্রাজিলে থাকার সুব্যবস্থা নেই’- এই খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে নাম প্রত্যাহার করে নেয় ফ্রান্স। ভারত প্রথমবারেরমত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেলেও তারা ব্রাজিলে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। অজুহাত, যাওয়ার ব্যয়ভার বহন করতে পারবে না।

ফিফা ঘোষণা দেয়, ভারতের আসা-যাওয়ার ব্যয় তারা বহন করবে। এরপর ভারত শর্ত দিয়েছিল, তারা বিশ্বকাপে খালি পায়ে খেলতে চায়। এর আগে ১৯৪৮ অলিম্পিক গেমসে তারা খালি পায়েই ফুটবল খেলেছিল; কিন্তু ফিফা এ বিষয়টা অনুমোদন দেয়নি। ফলে ভারতও নাম প্রত্যাহার করে নেয়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে খালি পায়ে খেলতে না দেয়ার অজুহাতে একমাত্র ভারতই সুযোগ পেয়েও নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।

১৬ দল থেকে ফিফা শেষ পর্যন্ত পেল ১৩ দল। ব্রাজিল আগেই ফিফাকে শর্ত দিয়েছিল, নতুন ফরম্যাটে তারা বিশ্বকাপের আয়োজন করতে চায়। আগের বিশ্বকাপগুলোতে ছিল নকআউট পদ্ধতিতে। এবার ব্রাজিল প্রস্তাব দেয় ১৬ দলকে চার গ্রুপে ভাগ করে প্রথম অনুষ্ঠিত হবে রাউন্ড রবিন লিগের খেলা। এরপর চার গ্রুপের সেরা চার দলকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল রাউন্ড। পয়েন্টের ভিত্তিতে ওই রাউন্ডে যারা এগিয়ে থাকবে, তারাই হবে চ্যাম্পিয়ন।

নতুন এই ফরম্যাট তৈরির প্রথম কারণই হলো, অর্থ এবং বাণিজ্য। আগের দুটি বিশ্বকাপে (১৯৩৪, ১৯৩৮) নকআউট পদ্ধতিতে আয়োজন করার ফলে তৃতীয়স্থান নির্ধারণীসহ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল মাত্র ১৬টি। নতুন ফরম্যাটে ম্যাচ বাড়বে আরও ১৪টি। অর্থাৎ ৩০ ম্যাচের টুর্নামেন্ট। এতে করে টিকিট বেশি বিক্রি হবে, রাজস্বও বেড়ে যাবে! একই সঙ্গে এই ফরম্যাটে প্রতিটি দল অন্তত তিনটি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে এবং রাজস্ব বেশি আয় হওয়ার ফলে ইউরোপিয়ান দলগুলোর যাতায়াতের ব্যয়ও তা থেকে বহন করার চিন্তা তৈরি হয়েছিল। ফিফা প্রথমে রাজি না হলেও ব্রাজিলের অনড় অবস্থানের ফলে তারা রাজি হয়ে যায়।

চার গ্রুপে ভাগ করে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে প্রথম পর্ব শেষ করা হয়। সেরা চার দল হিসেবে ফাইনাল রাউন্ডে উন্নীত হয় উরুগুয়ে, ব্রাজিল, সুইডেন এবং স্পেন। এই চার দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় শেষ পর্বের খেলা। ফাইনাল রাউন্ড থেকে উরুগুয়ে সর্বোচ্চ ৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরে নেয়। ৪ পয়েন্ট নিয়ে রানারআপ হয় স্বাগতিক ব্রাজিল।

ফুটবলের ইতিহাসে ১৯৫০ সালের চতুর্থ বিশ্বকাপটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৩০ সালে শুরু হওয়ার পর ইউরোপীয় রাজনীতির কালো থাবায় কিছুটা প্রভাবিত হয়েছিল বিশ্বকাপ। ১৯৩৪ আর ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপে ইতালির বেনিতো মুসোলিনি আর জার্মানির হিটলারের প্রভাবের কারণে কিছুটা বিতর্কিতও হয়েছিল; কিন্তু ১৯৫০ সাল থেকে বিশ্বকাপ ছিল বৈশ্বিক রাজনীতির সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত।

কিন্তু এত এত বিশেষত্বের সবই ম্লান হয়ে গেল ব্রাজিলের কাছে এসে। বিশ্বকাপের জন্য রিও ডি জেনিরোয় ব্রাজিল নির্মাণ করল বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ স্টেডিয়াম। দুই রাউন্ড শেষে সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী হবে চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেল যে, শেষ ম্যাচটিই পরিণত হয়েছিল ফাইনালরূপে।

রিও ডি জেনিরোর সেই বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামেই ১৯৫০ সালের ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছিল লিগের শেষ এবং শিরোপা নির্ধারণ ম্যাচটি। দুই প্রতিপক্ষ ব্রাজিল এবং উরুগুয়ে। এ ম্যাচে ড্র করলেও চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। নিজেদের মাঠে খেলা, ফুটবলপাগল ব্রাজিলিয়ানরা মাঠে না এসে কি থাকতে পারে! তারা ধরেই নিয়েছিল চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে ব্রাজিলই।

যে কারণে বিশ্বকাপের ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করে সর্বাধিক ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫৪ জন দর্শক উপস্থিত হয় শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি দেখার জন্য; পুরো মারাকানাকে স্তব্ধ করে দিয়ে সেদিন উরুগুয়ে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় ব্রাজিলকে। ৪৭ মিনিটে ফ্রিয়াকার গোলে এগিয়েও গিয়েছিল ব্রাজিল। মারাকানাজুড়ে তখন উৎসবের ঢেউ। বিশ্বকাপ শিরোপা যেন নিশ্চিত।

কিন্তু ৬৬ মিনিটে পুরো মারাকানাকে স্তব্দ করে দিয়ে সিয়াফিনো সমতায় ফেরান উরুগুয়েকে। এরপর ৭৯ মিনিটে ব্রাজিলিয়ানদের বুকে শেল বিধিয়ে দেন অ্যালডাইস ঘিগিয়া। গোলরক্ষক বারবোসাকে বোকা বানিয়ে ব্রাজিলের জালে বল জড়িয়ে দেন ঘিগিয়া। হেরে যায় ব্রাজিল। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে বলেছিলেন, ওই সময় যেন পুরো মারাকানায় মৃত্যুপুরির নিরবতা নেমে এসেছিল। অবিশ্বাসভরা দৃষ্টি আর বুকফাটা কষ্ট বিরাজ করছিল পুরো মারাকানায়। ব্রাজিলের এমন হার মেনে নিতে পারেনি ভক্তরা। তৎক্ষণাৎ গ্যালারিতেই আত্মহত্যা করে বসে ৫০-এর বেশি সমর্থক। হার্ট অ্যাটাকেও মৃত্যু হয়েছিল অনেকের। নিজেদের ইতিহাসে ব্রাজিলের জন্য এ দিনটি হয়ে রইল একটি কালো দিবস হিসেবে। ‘মারাকানাজ্জো’ হিসেবে ফুটবল ইতিহাসে পরিচিত ১৯৫০ বিশ্বকাপের ফাইনালের ঘটনা।
সম্পাদনা: আরএইচ/

আপনার মতামত দিন

[…] post ফুটবল ইতিহাসে ‘মারাকানাজ্জো’ হিসেবে … appeared first on নতুন […]

​Leave a Comment

-->
Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.