দ্বিতীয় বিশ্বকাপও গেল আয়োজকদের কাছে • নতুন ফেনীনতুন ফেনী দ্বিতীয় বিশ্বকাপও গেল আয়োজকদের কাছে • নতুন ফেনী
 ফেনী |
১৬ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্বিতীয় বিশ্বকাপও গেল আয়োজকদের কাছে

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ, ০৮ জুন ২০১৮

নিজস্ব প্রতিনিধি>>
বিশ্বকাপের ইতিহাসে আর কোনো আসর নিয়ে এতটা বিতর্ক হয়েছিল কি না সন্দেহ, ১৯৩৪ সালের বিশ্বকাপ নিয়ে যতটা হয়েছিল। ইতালির একনায়ক বেনিতো মুসোলিনি তখন ক্ষমতায়। একনায়কতন্ত্র প্রদর্শনের জন্যই মুসোলিনি বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। ফ্যাসিবাদের উদ্ভাবক, একনায়ক মুসোলিনি ক্ষমতার পূর্ণ পরাকাষ্ট্রা প্রদর্শন করেছিলেন নিজের দেশে আয়োজিত বিশ্বকাপে।

অভিযোগ রয়েছে, ইতালির বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে মুসোলিনির নির্দেশেই রেফারি নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, যাতে বিশ্বের ওপর ইতালির শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায়। অভিযোগ রয়েছে, মুসোলিনি তার ফ্যাসিজমের প্রচারণার কাজেই ১৯৩৪ বিশ্বকাপকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন। মুসোলিনি যে ব্যক্তিগতভাবে রেফারি নির্বাচন করে দিতেন, সেটা অনেকগুলো তদন্তেই বেরিয়ে এসেছিল। শুধু তাই নয়, ফিফার নিয়ম ভঙ্গ করে বিশ্বকাপের পদক বিতরণ করেছিলেন মুসোলিনি নিজে। এটা ছিল ইতালিয়ান ফ্যাসিজমের পূর্ণ বহিঃপ্রকাশ।

প্রথম বিশ্বকাপের মতো দ্বিতীয় বিশ্বকাপের শিরোপাও গেল আয়োজকদের কাছে। ১৯৩০ সালে লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়ের পর ১৯৩৪ সালের দ্বিতীয় বিশ্বকাপের আয়োজক ইউরোপের ইতালি। ইউরোপের মাটিতে বিশ্বকাপ আয়োজন হলো সেবার প্রথমবার। ১৯৩৪ সালের ২৭ মে থেকে শুরু হয়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর শেষ হয় ১০ জুন। চেকোস্লোভাকিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট জয় করে নেয় স্বাগতিক ইতালি। ফুটবলে ইতালির উপনাম হচ্ছে, আজ্জুরি (গিল আজ্জুরি অর্থ হলো- নিল সমূদ্র)।

‘যাতায়াত ব্যয় বহন করতে পারবে না’- এ অজুহাত দেখিয়ে প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি ইউরোপের অনেক দেশ। আয়োজক উরুগুয়ের একের পর এক দাওয়াতে সাড়া দিয়ে মাত্র চারটি ইউরোপিয়ান দেশ অংশ নিয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপে। এরই প্রতিবাদস্বরূপ দ্বিতীয় বিশ্বকাপে ইতালিতে খেলতেই আসেনি উরুগুয়ে। সেবারই ছিল একমাত্র বিশ্বকাপ, যেখানে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অংশ না নেওয়ার রেকর্ড হয়ে আছে।

ইতালিকে বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচন নিয়েও নাটক কম হয়নি। অভিযোগ ওঠে, এখানেও হাত ছিল মুসোলিনির। বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচনে আটবার বৈঠকে বসতে হয় ফিফার কার্যনির্বাহী কমিটিকে। অবশেষে ১৯৩২ সালের ৯ অক্টোবর স্টকহোমে অনুষ্ঠিত ফিফা কংগ্রেসে ইতালিকে আয়োজক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। তাও কোনো ভোটাভুটিতে নয়, মৌখিক মতামতের ভিত্তিতে।

নতুন ফেনী-জিএসশপ বিশ্বকাপ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন

বিশ্বকাপের প্রথম আসরে কোনো বাছাই পর্ব ছিল না। ১৯৩৪ বিশ্বকাপ থেকেই শুরু হয় বাছাই পর্ব। ৩২টি দেশ বিশ্বকাপে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করে। আয়োজক দেশ হয়েও ইতালিকে বাছাই পর্বে অংশ নিতে হয়েছিল সেবার। একমাত্র ওই বিশ্বকাপেই আয়োজক দেশ বাছাই পর্বে অংশ নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। বাছাই পর্ব পেরিয়ে ১৬টি দেশ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ১৬টি দেশের মধ্যে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্র এবং মিসর- এই চারটি দেশই ছিল ইউরোপের বাইরের। মিসর বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী প্রথম আফ্রিকান এবং মুসলিম দেশ। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ইতালি, স্পেন, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, চেকোস্লোভাকিয়া, রোমানিয়া, হল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, বেলজিয়াম এবং সুইডেন অংশ নেয়। বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র তিনদিন আগে ইতালির মাটিতে মেক্সিকোকে হারিয়ে বিশ্বকাপে ঠাঁই করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।

দ্বিতীয় বিশ্বকাপের জন্য ইতালি মোট আটটি ভেন্যু প্রস্তুত করে। শুরু থেকেই নকআউট পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের খেলাগুলো। ১৬টি দলকে আট গ্রুপে ভাগ করে প্রথম রাউন্ডে মোট আটটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী দিনেই আটটি স্টেডিয়ামে প্রথম রাউন্ডের আটটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। আট ম্যাচ থেকে জয়ী আটটি দল নিয়ে ৩১ মে অনুষ্ঠিত হয় কোয়ার্টার ফাইনাল।

আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে না থাকলেও রানার্সআপ আর্জেন্টিনা ছিল ১৯৩৪ দ্বিতীয় বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট; কিন্তু সুইডেনের কাছে ৩-২ গোলে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হয় আর্জেন্টাইনদের। ব্রাজিলও স্পেনের কাছে ৩-১ গোলে হেরে বিদায় নেয়। স্বাগতিক ইতালি ৭-১ গোলে হারায় যুক্তরাষ্ট্রকে। এ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন ইতালির সিয়াভিও। একই দিন জার্মানি ৫-২ গোলে হারায় বেলজিয়ামকে। জার্মানির কোনেনও হ্যাটট্রিক করেন ওই একই দিন।

কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক ইতালি আর স্পেন ১-১ গোলে ড্র করায় ১ জুন পুনরায় অনুষ্ঠিত হয় এই ম্যাচটি। তখন ফুটবলে টাইব্রেকারের কোনো নিয়ম ছিল না। পুনরায় অনুষ্ঠিত ম্যাচে স্পেনকে ১-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ইতালি। অন্য তিন ম্যাচে অস্ট্রিয়া ২-১ গোলে হাঙ্গেরিকে, জার্মানি ২-১ গোলে সুইডেনকে এবং চেকোস্লোভাকিয়া ৩-২ গোলে সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উন্নীত হয়।

সেমিফাইনালে অস্ট্রিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইতালি এবং জার্মানিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চেকোস্লোভাকিয়া উঠে যায় ফাইনালে। রোমের এস্তাদিও ল্যাজিওনেলে ১০ জুন অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি। টান টান উত্তেজনার এই ম্যাচে কোনো দলই গোল করতে সক্ষম হচ্ছিল না। আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণের ম্যাচের ৭০ মিনিট পর্যন্ত কোনো গোলই হয়নি।

অবশেষে ম্যাচের ১৯ মিনিট বাকি থাকতে চেকোস্লোভাকিয়াকে এগিয়ে দেন অ্যান্তোনিন পুক। ইতালি যেন পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায় ওই সময়। তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়নি। ম্যাচ শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে স্বাগতিক ইতালিকে সমতায় ফেরান রাইমুন্দো ওরসি। ১-১ গোলে ড্র হওয়ার কারণে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

ওই সময় অতিরিক্ত সময়ের খেলা ছিল সাডেন ডেথ। যে আগে গোল করবে, সেই বিজয়ী। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে খেলা। খেলার ৯৫ মিনিটে অ্যাঞ্জেলো সিয়াভিও গোল করলে চ্যাম্পিয়ন হয় ইতালি। ফাইনালে ৫৫ হাজার দর্শক উপস্থিত থেকে খেলা উপভোগ করেন। চেকোস্লোভাকিয়ার ওল্ডরিখ নেজেডলি পাঁচটি গোল করে জিতে নেন গোল্ডেন বুটের পুরস্কার।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি

আপনার মতামত দিন

[…] post দ্বিতীয় বিশ্বকাপও গেল আয়োজকদের কাছে appeared first on নতুন […]

​Leave a Comment

-->
Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.