১৯৫৪ বিশ্বকাপে নতুন জার্মানির আবির্ভাব • নতুন ফেনীনতুন ফেনী ১৯৫৪ বিশ্বকাপে নতুন জার্মানির আবির্ভাব • নতুন ফেনী
 ফেনী |
১৫ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৯৫৪ বিশ্বকাপে নতুন জার্মানির আবির্ভাব

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০১:১৩ অপরাহ্ণ, ১১ জুন ২০১৮

ক্রীড়া ডেস্ক>>
১৯৫০ বিশ্বকাপের মতো না হোক, ১৯৫৪ বিশ্বকাপও ছিল ট্র্যাজেডিতে ভরা। ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা দল হিসেবে বিবেচনা করা হতো ১৯৫৪ বিশ্বকাপে খেলতে আসা হাঙ্গেরি দলটিকে। সারাবিশ্ব শাসন করে যাচ্ছিল হাঙ্গেরি ফুটবল দল। ফেরেঞ্চ পুসকাস, স্যান্ডোর ককসিস, হিদেকুটিদের মতো বিশ্বখ্যাত এবং সর্বকালের সেরা ফুটবলাররা ছিলেন তখনকার হাঙ্গেরি দলটিতে। সবাই ধরে রেখেছিল, সেই হাঙ্গেরির হাতেই উঠতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ শিরোপা। অথচ, সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে, অপ্রত্যাশিতভাবেই ফাইনালে সেই হাঙ্গেরিকে হারিয়ে দিল পশ্চিম জার্মানি। হাঙ্গেরির সর্বকালের সেরা দলটিকে হারিয়ে ফুটবল বিশ্বে সেই যে জার্মানদের আবির্ভাব ঘটলো, এখনও শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে তারা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫০ বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারেনি। এর পরের বিশ্বকাপেই (১৯৫৮ সালে) ফুটবল বিশ্ব খুঁজে পেল নতুন জার্মানিকে। হাঙ্গেরিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই শিরোপা জিতে নিল পশ্চিম জার্মানি। সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত পঞ্চম বিশ্বকাপের ফাইনালটি ফুটবল ইতিহাসে বড় অঘটনের ঘটনা ‘মিরাকল অব বার্ন’ নামেই পরিচিত হয়ে রইল।

১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর ফিফার ৫০ বছর পূর্তিতে এর সদর দফতর সুইজারল্যান্ডেই অনুষ্ঠিত হলো পঞ্চম বিশ্বকাপের। ১৯৪৬ সালে ফিফা কংগ্রেসে সুইজারল্যান্ডকে ১৯৫৪ বিশ্বকাপের আয়োজক নির্ধারণ করা হয়। ওই একই দিন ১৯৫০ বিশ্বকাপের জন্য ব্রাজিলকেও নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এই প্রথম বিশ্বকাপের খেলা টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। পশ্চিম জার্মানি যুদ্ধ-পরবর্তী প্রথম দেশের বাইরে ফুটবল খেলতে আসে ১৯৫৪ সালেই। এই বিশ্বকাপটি ভিন্ন এক ফরম্যাটের। গ্রুপপর্বেই প্রচলন করা হয় অতিরিক্ত সময়ের। বিজয়ী দলের জন্য ২ পয়েন্ট, ড্র হলে ১ পয়েন্ট। ১৯৫০ সালের ফরম্যাট থেকে বেরিয়ে এসেছিল ১৯৫৪ সালে। ১৬ দল চার গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। এরপর প্রতি গ্রুপের সেরা দুটি করে দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় নকআউট পর্ব, অর্থাৎ কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল।

গ্রুপপর্বে পয়েন্টের ভিত্তিতেই নির্ধারতি করা হয়েছিল সেরা দুই দলের। যদি পয়েন্টের হিসেবে শীর্ষ কিংবা দ্বিতীয় স্থানে দুই দল সমান হয়ে যায়, তাহলে ওই দুই দলের মধ্যে একটি প্লে-অফের মাধ্যমে সেরা নির্ধারণ করার নিয়ম করা হয়। নকআউট পর্বে যদি নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলাও ড্র হয়, তাহলে সেই ম্যাচ পুনরায় আয়োজনের নিয়ম করা হয়।

পশ্চিম জার্মানি এই বিশ্বকাপেই এসেছিল অনিয়মিত ফুটবলারদের নিয়েই। ফুটবল ইতিহাসে তখন সবচেয়ে সেরা যুগটি পার করছিল হাঙ্গেরি। গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৯-০ গোলে এবং পশ্চিম জার্মানিকে ৮-৩ গোলে হারিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিয়েছিল হাঙ্গেরি। যে কোনো একক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ২৭ গোল করার রেকর্ড শুধু হাঙ্গেরিরই আছে। প্রথম পর্বে যে দলটিকে ৮-৩ গোলে হারিয়েছিল হাঙ্গেরিয়ানরা, সে দলটির কাছেই ফাইনালে উল্টো ৩-২ গোলে হেরে শিরোপা বঞ্চিত থাকতে হয়েছে হাঙ্গেরিকে। অথচ এর আগে টানা ৩২ ম্যাচে অপরাজিত ছিল তারা।

হাঙ্গেরি ফুটবলে তখন স্বর্ণযুগ। ফাইনালে এসে পুরোপুরি পরিবর্তিত জার্মানিকে দেখল তারা। অথচ, শক্তি, সামর্থ্য বিবেচনায় ওই ম্যাচে জয়ই প্রাপ্য ছিল হাঙ্গেরির। অভিযোগ রয়েছে, রেফারির কারণেই এমন অঘটনের ম্যাচে শিরোপা উৎসব করেছে পশ্চিম জার্মানি। যে কারণে ওই ম্যাচকে ফুটবল ইতিহাস নাম দিয়েছে, ‘দ্য মিরাকল অব বার্ন’।

বার্নে অনুষ্ঠিত ওই ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। দিনের শুরুতেই বৃষ্টিভাগ্য বয়ে নিয়ে এসেছিল জার্মানির জন্য। বৃষ্টির কারণে হাঙ্গেরি খেলতে না চাইলেও জার্মান অধিনায়ক ফ্রিটজ ওয়াল্টার যেভাবেই হোক খেলার কথা ঘোষণা দেন। যে কারণে ওই ফাইনালটি ‘ফ্রিটজ ওয়াল্টার ওয়েটার (ফ্রিটজ ওয়েল্টার ওয়েদার)’ নামেও পরিচিত। ইনজুরি সত্ত্বেও বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে খেলতে নামতে হয় পুসকাসকে।

৬ এবং ৯ মিনিটে পুসকাস আর জিবোরের দুটি গোল এগিয়েও দিয়েছিলে হাঙ্গেরিকে; কিন্তু পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যায় ম্যাচের ১০ মিনিটে। যে দল গ্রুপপর্বে বিধ্বস্ত হয়, সেই দলটি ফাইনাল ম্যাচের শুরুতে দুই গোল হজম করেও ঘুরে দাঁড়ায়। ১০ মিনিটে মর্লোক আর ১৯ মিনিটের সময় হেলমুট রান জার্মানিকে সমতায় ফিরিয়ে আনেন।

সমতায় ফিরে সমানতালে লড়তে থাকে জার্মানরা। এরই ফলশ্রুতিতে ৮৪ মিনিটে হেলমুট রান এগিয়ে দেন জার্মানিকে। এর ২ মিনিট পরই পুসকাস সমতায় ফেরান হাঙ্গেরিকে; কিন্তু রেফারি বিল লিং লাইন্সম্যান গ্রিফিথের সঙ্গে আলোচনা করে অফসাইড বলে ওই গোল বাতিল করে দেন। পরে টিভি ফুটেজ এবং জার্মানির ফুটবলারদের কথাতেও উঠে আসে ওটি অফসাইড ছিল না।

আরও একটি কারণে বিতর্কিত ছিল ১৯৫৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি। প্রথমার্ধের পর বিরতির সময় জার্মানির ফুটবলাররা ভিটামিন ‘সি’ গ্রহণ করেছিলেন। ডোপ আইনে এটি গুরুতর অপরাধ। অর্থাৎ প্রতারণা করেই বিশ্বকাপ জিতে নেয় জার্মানি। ফুটবল ইতিহাসের সেরা দল হাঙ্গেরিকে বঞ্চিত রাখে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন থেকে। হাঙ্গেরি হেরে যাওয়ার পর জিওর্জি এফজিপসি নামে তাদের দেশের বিখ্যাত এক সাংবাদিক কেঁদে ফেলেছিলেন। ওই বিশ্বকাপে হাঙ্গেরির স্যান্ডোর ককসিস সর্বোচ্চ ১১টি গোল করেন।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.