মিরসরাই প্রতিনিধি>>
টানা বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন, দুটি পৌরসভার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। এতে করে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ব্যঘাত ঘটছে। ঘূর্নিঝড় মোরার কারণে সৃষ্ট বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। উপজেলার বিভিন্ন সড়কে পানি উঠায় চলাচল করতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। পানিতে ভেসে গেছে উপজেলার মৎস্য জোন খ্যাত মুহুরী প্রকল্প এলাকার বেশকিছু মৎস্য প্রকল্পের কয়েক লাখ টাকার মাছ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার খাল-ছরাগুলো সংস্কার না থাকা ও অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করায় পানি নিস্কাসন সুবিধা না থাকার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। করেরহাট ইউনিয়নের সরকারতালুক গ্রামে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি পানি চলাচলের জায়গায় পুকুর খনন করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ওই ইউনিয়নের নন্দিপুর, সরকারতালুক, ছত্তরুয়া, দক্ষিণ অলিনগর প্লাবিত হয়েছে। থৈ থৈ পানিতে ভরে গেছে করেরহাট বাজার। সড়ক দিয়ে যান চলাচল করতে বাঁধার সম্মুক্ষিণ হচ্ছে।
ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুরে বাওয়াছড়ায় একটি ব্রিজ নির্মানে বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর কারণে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ওই এলাকায় স্থায়ী জলবাদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার ৩ নম্বর জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর সোনাপাহাড় এবং বারইয়াহাট পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শুধুমাত্র অপরিকল্পিতভাবে বহুতল বাড়ি এবং মার্কেট নির্মাণের ফলে মানুষ পানি বন্দি রয়েছে।
উপজেলার ৯ নম্বর ইউনিয়ন ও মিরসরাই পৌরসভার দক্ষিণ তালবাড়িয়া গ্রাম, খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ফেনাপুনি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঘরে কাঁচা চুলা পানিতে ডুবে যাওয়ায় রান্না-বান্না করতে পারছেনা, গ্রামগুলোর কোন ছেলে-মেয়ে . স্কুলে যেতে পারেনি।
এই জলাদ্ধতার কারণ হিসেবে জানতে চাইলে গ্রামের বাসিন্দা ছায়েফ উল্লাহ ও আব্দুল আজিজ জানান, ফেনাপুনি গ্রামের প্রায় সব পরিবার পানি বন্ধি হয়ে আছে। রান্নাঘরে পানি প্রবেশ করায় চুলায় আগুন দেয়া যাচ্ছেনা। রোজা রেখে রান্না না করে উপায় নেয়।
মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার বাসিন্দা নুরুল মোস্তফা বলেন, বড় বড় মৎস ব্যবসায়ীরা প্রকল্প খনন করেছে তবে পানি নিস্কাশনের জন্য কোন ড্রেন রাখেনি। এমন কি পানি নিস্কাশনের যে ব্রিজ,খাল,নদী ছিল তা জবর দখল করে পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ওছমানপুর ও ইছাখালী ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ।
এছাড়া উপজেলার ৭ নম্বর কাটাছরা, ১২ নম্বর খৈয়াছরা, ১১ নম্বর মঘাদিয়া, ৫ নম্বর ওছমানপুর, ৬ নম্বর ইছাখালী, ৮ নম্বর দুর্গাপুর (কিছু অংশ), ১৩ নম্বর মায়ানী, ১৫ নম্বর ওয়াহেদপুর, ১০ নম্বর মিঠানালা (কিছু অংশ) ও ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের কিছু অংশে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার শত শত পুকুর পানিতে ডুবে গেছে।
সৈদালী এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী আবু তাহেরের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘রান্না ঘরে পানি উঠার কারণে রান্না করা সম্ভব হচ্ছেনা। এভাবে আর কতদিন থাকতে হবে বুঝতে পারছিনা।’
এদিকে পাহাড়ী ঢলের কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। উপজেলায় সবচেয়ে বেশী উৎপাদিত শাকসবজি বরবটি, ঢেঁডশ, পুঁইশাক, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গাসহ বিভিন্ন ধরণের শাকসবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ জানান, গ্রীষ্মকালীন সবজির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টি কমে গেলে তেমন সমস্যা হবেনা।
সম্পাদনা: আরএইচ